চলতে চলতে মাঝে মাঝে মনে হয়, এই তো সেদিন চলা শুরু হল। এর মধ্যেই পেরিয়ে গেল এতটা রাস্তা? কতটা পথ বাকি সেটাই বা কে বলবে! সব পথ তো সবার নয়। ওই বড়জোর একসঙ্গে দু’কদম যাওয়া। কোনও সরাইতে একসঙ্গে দু’দণ্ড বিশ্রাম। আবার যার যার নিজের পথ দেখা। আবার হয়তো দেখা হতে পারে কোনও বন্দরে। আবার নাও পারে। এসব বাদ দিলে, পথ আসলে একা চলার জন্য। মানবজীবনকে একটা রাস্তা, কিংবা হাটবাজার বা যাত্রাপালার সঙ্গে তুলনা করার লব্জখানা আমাদের বহু ব্যবহারে জীর্ণ হলেও হাড়ে হাড়ে সত্যি। বলার কথা প্রায় সবারই আছে। লিখে ফেললেই গল্প। যার পথ যত আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু, তার ঝুলিতে বলার মতো গল্পেরা তত গিজগিজ করে। গল্প বলতে বলতে পথ চলো, তোমার চলার বোঝা হালকা হবে। কে বলতে পারে, তোমার গল্প হয়তো কারও কোনও কাজে লেগে গেল। বা তার গল্প তোমার। আর ধর তুমি সেই অজগরের পেটে হাতির ছবি না বোঝা ছোট্ট রাজপুত্র।
তবে কিনা, গল্প বলতে সবাই চায় না। বলতে চাইলেও লিখতে চায় আরও কম জনে। কেউ কেউ অবশ্য চলতে চলতে ভেবে ফেলে, মানুষটা সে সাধারণ হলেও এই মানবজন্মটা অসাধারণ। গল্প বলতে না জানলে কেউ শোনে না। কিন্তু লিখতে আটকাচ্ছে কে? ইচ্ছে যার হবে না সে পড়বে না। গল্প তাই লেখা হয়। আর অবাক কাণ্ড! কেউ কেউ পড়েও ফেলে। কারো কারো ভালও লেগে যায়। কেউ কেউ সেই ভাললাগা জানিয়েও যায়, পথ চলতে চলতে, কিংবা কোনও সরাইখানা বা বন্দরে দু’দণ্ডের দেখাতে। আবার অনেকটা হেঁটে চলার পর, হয়তো কোনও মরুদ্যানে বসে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে, কিংবা মাঝরাতে শ্মশানঘাটের পোড়ো মন্দিরের আঙিনায় বসে মনে পড়ে, আরে! অনেক গল্প তো বলা হল না! আর যদি তুমি অ্যালিসের মতো মুছে যাওয়া বিড়ালের হাসি দেখে ফেল।
তাই আবার লেখা হয়। যত দীর্ঘ পথ তত লম্বা, তত বেশি গল্প। পথ যদি বা ফুরোয়, কাহিনি অফুরান—সব বলা হয়ে ওঠে না। অথবা উল্টোটা। এক সময় বলার মতো কিছু ঘটে না, অথচ পথ ফুরোতে চায় না, তাতেই জাগে চলায় অনীহা। তার চেয়ে এই ভাল। পথ চলুক এঁকেবেঁকে, উঠেনেমে। চলতে থাকুক পথ চলা। মাঝে মাঝে মনে হয়, কতদিন ধরে চলছি! এবার একটু জিরিয়ে নিলে হয়। গল্প বলা যাক।
তাই শঙ্খ আবার লিখলেন, ছবি আঁকলেন অনেক ‘আটঘাট বেঁধে’।
শঙ্খ কর ভৌমিক
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার বিশ্বরেকর্ডের দাবিদার। ল্যামি, লামা, খুড়ো, তারাপদ, অপু এবং আরও বহু বিচিত্র ডাকনামে পরিচিত। লোকে অজাতশত্রু বলে থাকে। জন্ম ও বড় হওয়া ত্রিপুরার আগরতলায়, নবজন্ম শিবপুর বি ই কলেজে। গত কুড়িপঁচিশ বছরে ইঞ্জিনিয়ার, ফিরিওয়ালা, অধ্যাপক, শখের গোয়েন্দা, ব্যবসা ইত্যাদি গোটা আটেক বিভিন্ন পেশায় ভাগ্যপরীক্ষা করার পর সফটওয়্যার কোম্পানিতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট দেখাশোনা করা, এই ছিল চোদ্দো নম্বর চাকরি। আপাতত পেশায় গেঞ্জিওয়ালা। নেশা মানুষ জমানো। বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অধ্যাপক, পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে কাঠবেকার সবাই আছেন। একটু আধটু লেখা আর ছবিটবি আঁকার বদঅভ্যাস আছে। এক আধটা লেখা বড় কাগজেও বেরিয়ে গেছে। প্রিয় খাদ্যপানীয়ের মধ্যে পড়ে চা এবং যাবতীয় তামাকজাত দ্রব্য। গোমড়ামুখো লোককে বড় ভয়। যে কোন ছিঁচকাদুনে বাচ্চাকে গ্যারান্টিসহকারে হাসানোর বিরল প্রতিভার অধিকারী। ‘সাত ঘাটের জল’-এর পরে ‘আটঘাট বেঁধে’ লেখা হল তাঁর দ্বিতীয় বই।
সমালোচনা পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।