স্বধর্মে নিমজ্জিত বাঙালি বড় কৌতুকপ্রিয়। আলি সাহেব থেকে রাধাপ্রসাদ আপাতত আসর জমিয়েছেন এখানে, এনসিসি ক্যাম্পের ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ গোত্রের কঠোর সমালোচনা আত্মবিস্মৃতের মতোই স্বধর্মে নিমজ্জিত। সুতরাং বেশুমার খেউড়-গল্পের উত্তর কলকাতা সমস্ত জরাজীর্ণ বলিরেখার গলিঘুঁজি নিয়ে উড্ডীন এই কেতাবি চর্চায়।
এই প্রহসনমালা এক কথায় সুমনের গানের মতো, আমাদের প্রথম সব কিছু। আছে হরতন রুইতনে সাজানো দেশ ও ক্যালিফোর্নিয়ার হোটেলগুচ্ছ। উত্তর কলকাতার সিমলে পাড়ার নরেন দত্তর ভাই থেকে সিলিকন ভ্যালির স্টার্টাপ, চীনে খাবার থেকে সুচিত্রা মিত্র—পাগলা ষাঁড়ের আক্রমণ ঠেকাবার উপায় ভিন্ন যাপনের সকল গল্প ও পন্থাই এই মহাগ্রন্থে উপস্থিত। যে চোখে এই কলকাতা দেখা, সে বদলেছে অনেক। পেটে জল পড়েছে অনেক ঘাটের। কলকাতা, সল্টলেক, খড়প্পুর থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে মার্কিন মুলুকের নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া। তাই বোতাম-ছেঁড়া ঢলঢলে হাপ-প্যান্টুলের পাশে ইতালিয়ান নাবিকের চপিনোর গন্ধ নিয়ে উপস্থিত। এই মহাগ্রন্থ ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারক বাঙালির কুঁড়েমির গাথায় নতুন সংযোজন। এই বই হাতে থাকলেই তীর্থ, পড়লে সাক্ষাৎ পরমার্থ।
সম্বিৎ বসু
আড্ডাকে সুচারু আর্টের স্তরে নিয়ে যাবার জন্যে পরমবীরচক্রের দাবীদার সম্বিৎ বসুর জন্ম ষাটের দশকের শেষে। জন্মসূত্রে মোহনবাগান ও উত্তর কলকাতা। শৈশব আমহার্স্ট স্ট্রিট, ঝামাপুকুর এলাকায়। বাড়বৃদ্ধি সত্তর-আশির দশকের উন্মুক্ত-আকাশ লেকটাউন ও প্রাক-সিটি-সেন্টার ধু-ধু সল্ট লেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ছুতোয় ল্যাদ ও আড্ডায় পাক্কা ট্রেনিং। ১৯৯৩ সালে উচ্চশিক্ষায় বিদেশগমন ও ঠ্যালার নাম বাবাজী দর্শন। গ্রাসাচ্ছাদন, তথ্য-প্রযুক্তির সূতিকাগার, সিলিকন ভ্যালির ছোট-বড় কোম্পানিতে। এ দশকের শুরুতে কর্মসূত্রে বছর তিনেক ব্যাঙ্গালোর বাস। গেল কুড়ি বছরের বাকি সময় অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলের সমুদ্র-পাহাড়-টাহাড় নিয়ে জমজমাট ক্যালিফোর্নিয়ায়।
লেখালিখির শুরু ইন্টারনেটের বাঙালি ফোরামে। সে গত শতাব্দীর কাজ। গুজব এই যে প্রথম বাংলা আন্তর্জাল পত্রিকা ‘পরবাস’ শুরু করার পেছনে হাত আছে। অতঃপর গুরুচন্ডা৯-র ঠেকে হাতমক্সো। এবং ফেসবুকে। নাটকের চর্চা করেছেন বহুদিন। যথেষ্ট দর্শকের অভাবে এখন রিটায়ার্ড হার্ট। সঙ্গীতে দিলচসপি বাড়াবাড়ি রকমের। তিন-চার রকম বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন একসময়ে। এখন শুধুই বাহুমূল। যদিও গান গাইতে বললে শব্দ বেরোয় না তথাপি গান বাঁধতে খুব উৎসাহ। আশা রাখেন একদিন সেসব গান সুকণ্ঠে হ্যামলিনিয়ে জগজ্জনকে আচ্ছন্ন করে দেবে।
প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আপাতত একটিই। প্রবন্ধ-টবন্ধ বেরিয়েছে এদিক-সেদিক।
স্ত্রী পারমিতা ও দুই কন্যা-সহ বাস করেন ক্যালিফোর্নিয়ায় স্যান ফ্র্যানসিসকো শহরের তলিতে। স্বপ্ন দেখেন একদিন কলকাতায় ফিরে পেশাদার আড্ডাবাজের জীবন ফিরে পাবেন।
আলোচনা সমালোচনাগুলো পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।