গ্রীসের পূর্বপ্রান্তে থেসালোকিনিতে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে উজো চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করে। অতিথিদের হাতে নাকি ঘরে বানানো ৎসিপুরো দেওয়াই দস্তুর। বর্দোর খাদ্য ও মদ্য অনবদ্য, উপরি ট্রামে চাপলে সহযাত্রীরা কেবল গল্প জোড়ে তাই নয় বাড়ি নিয়ে গিয়ে মৌরি স্বাদের রেগলেস পান করায়। হরেক নেমন্তন্নের ফরাসি মালপোয়া আর কানালে পিঠে টপকে শহরের এন্তার পুরনো মাছের বাজার হাজির। শহরের প্রাচীন গণিকাপল্লী থেকে স্লেভ মার্কেট সর্বত্রই দরবার ফেঁদেছেন তিনি। বৃষ্টিতে পাহাড় গলে ক্যাডবেরির মতো ভ্যাদভেদে হয়ে গেলেও বুরেনে সাইকেলে বা ম্যারাথনে তাঁর আড্ডার কমতি নেই। বর্ষা ভেজা প্যারিসের গার দ্য লে’স্ত-এর সামনে পা-প্লুই করে ছাতা বিক্রি করা বা নিউ ইয়র্কের লিটল ইটালিতে সার-সার রেঁস্তোরায় মাফিয়া কায়দায় খদ্দের পাকড়াও তাঁর কাছে জলভাত। রোমান জিপসি তাঁকে জাতভাই ঠাউরে ভেড়া দেখিয়ে নামতা আওড়ায়। ভাস্কো দা গামা লিসবনের যেখান থেকে অনন্তযাত্রায় ভেসে পড়েছিলেন সেখানে সোনায় বাঁধানো দাঁত দেখে তিনি পান হাশিশের সন্ধান। এভাবেই খোঁজ পাবেন জিনজিনহার, যারা বিক্রি করে কেবল গ্যাঁজানো চেরি তাও কয়েকশো বছর ধরে।
প্যারামাউন্টের মালিককে এন্ডারফ্লাওয়ারের শরবৎ চাখিয়ে আবার আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণে জ্যাকি লেনক্সে লাইন দিয়ে কিনে আনেন খবরের কাগজে মোড়া আলু আর মাছভাজা। লম্বা লাইন আঁকেন পর্তুগালের লিশবোয় রামিরোর মাছের দোকানের বাইরেও। পেয়ে যান দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার সুফল, বেয়ারারা দৌড়াদৌড়ি করে ধরিয়ে যায় মাখন-রুটি-সুরা আর এন্তার গল্পগাছা। এভাবেই কাউবয়ের ল্যাসো পাক খায় রোডেও শো’তে। তবে এসব তুচ্ছ জিনিসে পথ হারালে আড্ডাঘর খাঁখাঁ করে, দস্তরখানের উপরে পড়ে থাকে রুটি-বাদাম-শোর্বা-কোর্মা-কালিয়ার বড়াখানা, ঠান্ডা হয় চা।
দস্তরখান আদপে একটি তুর্কি শব্দ যার অস্যার্থ টেবিলক্লথ। তবে কেবল খাবারই নয়, মানুষের বেঁচে থাকা, আহ্লাদ, দুঃখকষ্ট, গল্পগুজব সমস্তই এর চারপাশে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঘুরপাক খেয়ে চলেছে।
গোরা রায় সম্পর্কে দুটো একটা কথা যা আমরা জানি
গোরা ফেরার হইয়া চলিয়া গেল। তাহার চলার আঁকাবাঁকা পথে যে নানা রকমের কিছুমিছু পড়ে রইল তা কেউ কোচড়ে ভরে হাপ নারকোলের মালায় ভ’রে খেল, কেউ পকেটে ঢিল হিসাবে নিয়ে গেরস্তের কাচ ভাঙল। মানুষ পামর ও গোরা অমর। উভয়েরই তাতে কচু। সুশীল সমাজ আপন নিয়মের বশবর্তী হয়ে একটি গালে সপাটে একটি থাবড়া খেয়ে সিমেট্রির দোহাই দিয়ে অন্য গালটি সানন্দে বাড়িয়ে দিল ও তার পর গাল ফোলা গোবিন্দের মামা হয়ে ধিনিকেষ্টের মতো নৃত্য করতে লাগল। চুলোয় যাক সব ভদ্দরলোকের সৃষ্টি, আসুক তেড়ে বৃষ্টি, এই সব জপতে জপতে একগাদা ছেলে মেয়ে গোরার অপেক্ষায় সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেলে বসে আঁকো করতে জমায়েত হল। কেউ তাঁকে পায়ের উপর পা তুলে বোতল সিদ্ধ অবস্থায় চারিদিকে খালি নানা খালি বোতলের শবদেহের শ্মশানে ধ্যনমগ্ন অবস্থায় এঁকেছে। তাঁর মুখ দিয়ে ভকভক করে কারণবারির গন্ধ বেরোচ্ছে আর চারপাশে ক’টি অমায়িক শিষ্য সেই সব প্রায় খালি বোতলগুলো থেকে ড্রপ ড্রপ প্রসাদ নিচ্ছে। সামনে একটা মরার খুলির মতো দেখতে বকযন্ত্রে চোলাই চলছে, গোরার চক্ষু দু’টি টকটকে লাল। ছবিতে কারণবারির গন্ধটা কাগজের উপর হার্ডওয়ারের দোকানের ইস্পিরিট ফেলে বানানো হয়েছে। বিনীতা কেমন আছ টাইপের আর একটি মেয়ে বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়ে খুব মন দিয়ে গোরার অন্য একখানি অবতার বানাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে গোরা জরির লাল জাঙিয়ার উপর একখানি স্বচ্ছ আলখাল্লা পরে কোলবালিশের উপর এলিয়ে পড়ে আছে। বাম হাতে পিওর কোহল, ডান হাতে মুদ্রা তাঁর শঙ্কাহরণ। তাছাড়াও আছে একটি দাঁত তোলার সাঁড়াশি। মাথার পিছনে একটি বোর্ডের উপর লেখা, ‘ড. গোরা রায় (এম্বিবিএস)— দাঁত কে লিয়ে উপরে আসুন।’ যদিও ফাস্টো প্রাইজটি পাবে তারে জমিন পর আর সেকেন্ড হবে শারুখ খান।
আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপর ক্লিক করুন।