যে কোনও যুদ্ধই পরাজিত ভূমির মতো অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় নারীর উপরে।নারী এসে দাঁড়ায় অত্যাচারের মূল কেন্দ্রে। যেমন হয়েছে সার্বিয়া বসনিয়ার যুদ্ধে, মধ্যপ্রাচ্যে, ইয়েজিদি ও কুর্দ মেয়েদের সঙ্গে। যেমন হয়েছে লালফৌজ অধিকৃত বার্লিনে। ঠিক তেমনটি হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে। ৪ লক্ষের বেশি নারীর ধর্ষণ ঘটেছিল পাক—সেনাদের বাঙ্কারে বাঙ্কারে। কুরবানির পশুর মতো তাদের ধরে নিয়ে যেত সেনারা, নিজেদের বিশেষ খিদে মেটাতে। যুদ্ধের এ এক মুখ, যেখানে নারীর গর্ভও দখলের জমি। কিন্তু যুদ্ধকালে দেশ, পরিবার-সন্তান সন্ততি রক্ষায় সর্বপ্রথম নারীই অবতীর্ণ হয়েছে যোদ্ধার ভুমিকায়। নারী যোদ্ধাদের আজানা কাহিনি ছড়িয়ে আছে ইতিহাসের পাতায় পাতায়। সেখানে সে শুধুমাত্র লাঞ্ছিতা নয়, বীর কন্যা, বীর জায়া, বীর মাতা। ইতিহাসের প্রতিটি সংগ্রামে তাঁরা হয়ে আছে কিংবদন্তী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি কোমর বেঁধেছেন বাংলার নারী। অথচ বীরের সম্মান লাভ করেছে যারা তারা প্রায় সকলে পুরুষ। আর নারীর ভুমিকা – ‘নির্যাতনের শিকার’ বয়ানে সীমাবদ্ধ। নারীর বীরোচিত ভুমিকা আজও তাই দৃষ্টির আড়ালে।তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, খবর আদান-প্রদান করে, অস্ত্রশিক্ষা নিয়ে নানা ভাবে যুদ্ধকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
‘দ্রোহকালের দামিনী’ বারো জন মহিলা মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিকথা সংকলন। বাংলাদেশের জেলায় জেলায় ঘুরে কলম্বিয়ার চিত্রগ্রাহক-সাংবাদিক কার্লোস সাভেদ্রা এদের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ করেছেন।ঝর্ণা বসু সেগুলি পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে গড়ে তুলেছেন এক নতুন ইতিহাস। গীতা কর, লায়লা পারভিন বানু, লুবনা মরিয়ম, বাসনা হালদার, মেহেরুন্নেছা মিরা—সকলে এক একটা ইতিহাসের পাতা হয়ে উঠেছেন।
কার্লোস সাভেদ্রা

কার্লোস সাভেদ্রা স্বনামধন্য চিত্রসাংবাদিক। কলম্বিয়ার এই সাংবাদিক ফোটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশুনো করেছেন তাঁর দেশের রাজধানী বোগোতার ল্যাসলে কলেজে। তাঁর সাদা-কালো ছবিতে মানবজীবনের বিভিন্ন দিক ফুটে ওঠে। তিনি শিশু, মাতৃত্ব, বার্ধক্য, মৃত্যু এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে ছবিতে ধরেন। তাঁর আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস, লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি, মেক্সিকো সিটি, ইস্তানবুল ও ঢাকায়।
ঝর্ণা বসু

জন্ম ১১ অগস্ট ১৯৫২ পূর্ববঙ্গের পূর্বতন খুলনা জেলার বাগেরহাটে। মনমোহিনী গার্লস স্কুলে পড়াশুনো। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবাকে খুন হতে দেখেন রাজাকারদের হাতে। অতঃপর কিছুকাল দেশে থাকার বৃথা চেষ্টা করে শরণার্থীদের দলে নাম লেখানো। পরে দেশ স্বাধীন হলে ফিরে যাওয়া প্রাণের বাংলাদেশে। সেখানে প্রফুল্লচন্দ্র মহাবিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ অন্তে বাগেরহাট গার্লস কলেজে অধ্যাপিকা হিসেবে যোগদান। ফের দেশছাড়া হওয়া ১৯৭৮ সালে। বর্তমান আবাস উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত। সম্পাদিত বইয়ের তালিকায় রয়েছে ‘অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন’, ‘বিপন্ন কালের ভেলা’, ‘হৃদয়ের টুকরোয় গাঁথা’ ‘ভাগফল ৭১ মেয়েদের কথা’ ইত্যাদি। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণামূলক বই ‘বঙ্গে নারী শিক্ষার প্রবর্তক কালীকৃষ্ণ মিত্র, যুগ ও সাধনা’।
আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপর ক্লিক করুন।
