চল্লিশ বছর ধরে সন্দেশ পত্রিকায় বেরিয়েছে প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর। সত্যজিৎ রায়, সত্যেন বসু প্রমুখের প্রণোদনায় জীবন সর্দার একটানা লিখে গেছেন আমাদের বাড়ির চারপাশের আরশিনগরের কথা। পাখি, পোকা, প্রজাপতি গাছপালা আর জীবজন্তুর আজব জগতের কথা। জায়গা তৈরি করতে চেয়েছেন শিশুর মনে এই প্রতিবেশীদের জন্যে। বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতির উপর এই যথেচ্ছাচারের ফল ভাল হবার কথা নয়। লিখছেন হাওয়াতে যদি বিষের ধোঁয়া মেশে আমরা তখন তার কুফল কতটুকু বুঝি! প্রাণী আর উদ্ভিদের শরীরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় তার পরিণাম। কিন্তু মহাকাশ থেকে তোলাছবি দেখে বোঝা গেছে পৃথিবীর হাওয়ার ভাল গুণ হারিয়েছে। যদি এ সব সত্যি হয়, তবে, পৃথিবী দূর থেকে সুন্দর হলেও কাছে থাকার মতো নয়। অথচ পৃথিবীটাকে, মানে প্রকৃতিকে আগামীর মানুষের জন্যে নির্মল বিশুদ্ধ রাখতে হবে। পৃথিবীর রূপগুণের কারণ প্রকৃতি। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যে কত নিবিড় সেই খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। মানুষ প্রকৃতির একটি অংশ মাত্র, প্রকৃতির প্রভু নয়—এ কথাটি এত কাল কেউ মানতে না চাইলেও আজ বুঝি সেই সময় এসেছে।
এই বই আসলে দেখতে শেখায়। বালিপিঁপড়ে থেকে দোয়েলপাখি। যা কিছু দেখলে আমাদের ভালবাসা মায়া বাড়বে প্রকৃতির জন্যে। এই বই সেই জাদু আয়না। পৃথিবী নামের এই আশ্চর্য সবুজ গ্রহটাকে বাঁচাবার জন্যে একটা চমৎকার প্রতিবাদের শুরু হওয়া আশু প্রয়োজন। আর সেই লড়াইয়ের হাতিয়ার এই বই, সন্তানের হাতে তুলে দেবার প্রকৃতি চেনার, প্রকৃতিকে ভালবাসবার এই সহজপাঠ।
জীবন সর্দার
জন্ম ১৯৩৫ সালে বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুরে। প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া বাংলাদেশে। পরবর্তীকালে কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। পরিবেশ সংক্রান্ত জ্ঞানার্জনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরপত্র শিক্ষায় নিজেকে প্রিয় বিষয়ে শিক্ষিত করেছেন। প্রকৃতির রহস্য জানার ইচ্ছে আশৈশব। ১৯৪৮সালে বসু বিজ্ঞান মন্দিরে গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয়ের শিক্ষায় প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ চর্চা শুরু করেন। কিশোর বয়স থেকেই খগেন্দ্রনাথ মিত্র সম্পাদিত ‘কিশোর’ নামে পত্রিকায় প্রথম লেখালেখি শুরু। চাকুরি জীবন থেকে অবসর নেবার আগেই ১৯৯১সালে বাংলা ভাষার বিজ্ঞান প্রসার আন্দোলনে ব্রতী হন। এ বিষয়ে তাঁর নির্দেশক আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু। এখন ইকো ক্লাব আন্দোলনের সর্ব সময়ের কর্মী। বর্তমানে ‘কিশোর বিজ্ঞানী’ পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকার সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য পুরস্কারে পুরস্কৃত। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ তাঁকে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং আজীবন স্বীকৃতির নিদর্শন হিসেবে সরকারের জীব বৈচিত্র্য বিভাগের মানপত্র পেয়েছেন। প্রাণী ও প্রযুক্তির রূপগুণ আচার আচরণ সম্পর্কে ওঁর লেখা এ পর্যন্ত নয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
সন্দেশ ছোটদের পত্রিকা ৩য় পর্যায়ে ১৯৬১সালে প্রথম প্রকাশ থেকে ‘প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর’এর পরিচালক লেখক। ‘জীবন সর্দার’ ‘লেখনি নাম’। সম্পাদকদের কাছ থেকে পাওয়া। নামটি রবীন্দ্রনাথের ‘ফাল্গুনী’ নাটক থেকে নেওয়া। বর্তমানে এই নামেই বিশেষ পরিচিত। পঞ্চাশ বছরের উপর সন্দেশে প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তরে কাজ করে শিশু কিশোরদের মনে প্রকৃতি সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করে চলেছেন।
আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।
বইয়ের দেশ, জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০১৯ প্রকাশিত সমালোচনা
আনন্দবাজার পত্রিকার নজরে, পুস্তক পরিচয়, ২৫ জুলাই ২০২০