বাঙালির গৌরবময় অতীতের অন্যতম বিলাস মাছ শিকার। অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশে খাল-বিলের অভাব ছিল না। অভাব ছিল না বাড়তি সময়ের। বাঁধ-টাঁধ সেভাবে থাপ্পড় বসায়নি ফলত নদ-নদী-নালা কারোরই ছিল পরিপূর্ণ বিকাশে কোনও অন্তরায়। ভারতবাসী না হলেও মাছেরা ছিল স্বাধীন। ফি বর্ষা-প্লাবনে প্রকৃত সমাজতান্ত্রিক রূপে শ্রেণি বৈষম্য ঘুচিয়ে সকলের গৃহের আনাচে কানাচে মৎস্যকূল ছিল নৃত্যরত। এমনকী সাহেবরা অবসর বিনোদনে দেশিয় মৎস্যকূলের বিকল্প সন্ধান করতেন নেটিভ মাছেদের মধ্যে। দেশভাগ থেকে বিশ্বায়ন বিবিধ ধাক্কায় বাঙালি যে মুলুকেই ঠাঁই গেড়েছেন খুঁজে বেড়িয়েছেন মৎস্যশিকারের লুপ্তপ্রায় সুখ।
এই বইতে হাজির মৎস্যশিকারের যতেক লুপ্ত কারসাজি— যন্ত্রপাতি ও কলাকৌশল। গুপ্তমন্ত্র, চুরিচামারি কিছুই বাদ নেই। আছে মেছোভূত থেকে বিষধর সাপ অজস্র বিপদের গুঞ্জরন। আছে বিস্মরণে চলে যাওয়া কিছু ‘বাঙালি বিপ্লবী’ চরিত্র, গল্পগাথা, নিষ্পাপ কার্টুন থেকে পঞ্জিকার বিজ্ঞাপন। এ মলাট থেকে ও মলাট জুড়ে এক ‘নিশ্চিন্ততা’র আঁশটে গন্ধ, পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লেও দোষের কিছু নেই।
২য় ব্লার্ব
গদ্যসংগ্রহে নিজেদের মাছ ধরার গৌরবগাথা ফলাও করে লিখেছেন নানা সময়ের নানা দিকপাল বাঙালি। কোথাও সমুদ্রে মাছ ধরার যুদ্ধ কোথাও বর্ষার মাঠে কই শিকার ভয়াল অভিজ্ঞতা। আছে মাঝরাতের মাছ শিকারের তুকতাক, আছে মেয়েদের মাছ শিকারের অশ্রুত আকাঙ্খা। কেউ শিখিয়েছেন নানা চার রান্নার মশলা। কোন মাছের কেমন গতিপ্রকৃতি তাও লিখে রেখেছেন শিকারিরা। ভোঁদড়, পাখি বা হাঁসের বাচ্চার টোপ দিয়ে মাছ শিকারের কথাও লেখা হয়েছে এই বইতে। আছে দেশি-বিদেশি নানা ছিপের ফিরিস্তি আছে জালের ফাঁক ফোঁকরের অভিসন্ধি। আছে ইলিশ শিকার ও কাঁকড়া শিকারের আবহমান গল্পের বাস্তব রেখাচিত্র। আছে ভারতে মৎস্য শিকারের নতুন অবতার স্পোর্টস ফিশিং নিয়ে অঢেল ঢক্কানিনাদ।
বাঙালির মৎস্যশিকার। দীর্ঘশ্বাস ভিন্ন এর সঠিক রূপ কল্পনা করা অসম্ভব।
এই বই বাঙালির হারিয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের সংকলন।