স্মৃতি, গলি, তস্য গলিতে ভরা। সাইকেলের সর্বত্রই অবাধ গতি। ‘দু-চাকার দুনিয়া’য় আছে সাইকেল পর্যটনে জাতীয়তাবাদী টক্কর। স্বাধীনতার পুর্ব থেকেই থানার দারোগা, শিক্ষাবিদ পাদরি, ডাক পিয়োন, দুধ বিক্রেতা থেকে খবরের কাগজওয়ালা সকলের কাছেই সাইকেল হয়ে উঠেছিল অপরিহার্য। দেশান্তরিত ছিন্নমূল বাঙালি সাইকেলকেই করে তুলেছিল বৈষম্য অতিক্রম করার মন্ত্র। সাইকেল চড়ে যেন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যেতে চেয়েছিল অন্য উচ্চতায়। সত্তর দশকের শুরুতে প্রত্যেকবাড়িতে একটা ‘ফ্লাইং পিজিয়ন’ সাইকেল রাখা উন্নতির সূচক বলে ঘোষণা করেছিল চিনের কমিউনিস্ট সরকার। আমাদের মিটিঙ মিছিলে পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়েছিল প্যাডেলগুলি। সাইকেল হয়ে উঠেছিল দিন বদলের অঙ্গীকারের সাক্ষী, কোথাও প্রম ও প্রত্যাখ্যান হাত ধরাধরা করে হেঁটেছিল প্রত্যগ্র অভিলাষে। সাইকেলের ব্যক্তিগত সিংহাসন সেজে উঠছিল রঙিন রিফেক্টর ও নানা উপচারে। ছিল দিবারাত্র সাইকেল চালিয়ে বিকল্প জীবিকার সন্ধানে মেতে থাকার বাঙালির অন্য রকম হয়ে ওঠার সংকল্প। জেমস ক্লার্কের ‘হিস্ট্রি অফ বাই সাইকেল’ যাকে বলে ‘সাইকেল সাইকোলজি’।
নতুন করে শুরু হয়েছে সাইকেল চর্চা। দুর্গমকে অতিক্রম করা, জীবনে নতুন চ্যালেঞ্জ নিজেই লেখার পাশাপাশি আছে সচেতনতা মূল অভিযান। কলকাতার রাজপথের হাজার বায়ানাক্কা ও পুলিশি নেকরা সামলাতে সোচ্চার নতুন দিনের সাইকেল চালিয়ে সংগঠন। চেষ্টা চালানো ‘পরিবেশ বান্ধব’ সাইকেলকে জনপ্রিয় করার। যখন অ্যাডভেঞ্চারের কত শত ডানা কাটা যায় নিষেধের ঘেরা টোপে সেগুলো জিতে নিতে দিকে দিকে ডাক উঠেছে ‘ফিরে এসো চাকা’। এই বইতে সাইকেল আমাদের শত সহস্র ওঠা পড়ার সঙ্গী, সে ‘দূরকে নিকট এনে’ জয় করেছে সে সহস্র মন, আছে অজস্র ‘প্রথম প্রেমে’র একঘেয়ে সাইকেল উপাখ্যান, আছে গভীরগোপন ব্যথা ছুঁয়ে থাকার অঙ্গীকার। সাইকেল চোরেদের নিয়ে নানান কিসিমের কিস্সা বাঙালির বাই সাইকেল। আছে পুরনো কলকাতার সাইকেল চর্চা, বাঙালির বিজ্ঞানীর তৈরি বিচিত্র সব সাইকেলের কথা, আছে টিমটিমে বাতি জ্বালা সাইকেল সারাইয়ের দোকান। ব্যক্তিগত শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে নস্টালজিয়া ফুটে উঠেছে বিচিত্র স্পোক, টায়ার টিউব, সিরিঞ্জ, বেল, ডায়নামো, স্ট্যান্ডে লিখে রাখা পথ চলার কথা অক্ষরে অক্ষরে।
সামরান হুদা
জন্ম সিলেটের ঝরনার পারে। বড় হওয়া সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের সুর্মা নদী আর তার আশেপাশে ছড়ানো পাহাড়ি টিলায়। প্রতিটি ছুটির দিনে ছুটে যাওয়া দেশের বাড়ি। তিতাস পারের ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়। বিনোদনে নৌকা বাইচ অথবা বাড়িতে কর্মরত মেয়েদের কাছে শোনা রূপকথা। পূবালী বাতসে সূয়া ওড়ে অহরহ মেয়েলী গীতে। অতঃপর অন্তঃপুরে প্রবেশ। ১৯৮৬ সালের পাতাঝরা এক শীতল দিনে ছেড়ে আসা প্রিয় বাংলাদেশকে। ক্রমশ অভ্যস্ত দেশান্তরী জীবনে। হেঁশেলকেই হাতিয়ার করে অন্তঃপুরবাসিনী। বিলাসে বারে বারে ফিরে যাওয়া সেই সবুজ বাংলাদেশে। অগত্যা লেখালিখিই তার সেই সময়যান।
প্রকাশিত বই- অতঃপর অন্তঃপুরে, পুবালি পিঞ্জিরা, স্বাদ সঞ্চয়িতা।