বইয়ের ২০১৮

 

বিশাল ব্যস্ততা সকলের, তবু শুরু করে দেওয়া হল নতুন পাতা। যে ছাব্বিশটি বই নিয়ে কাজ করছি আমরা একে একে তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছে। আগামী কিছুদিন আমাদের কাটবে প্রোডাকশনে,  প্রোমোশনে ও পাবলিসিটিতে। আমাদের যারা এখনও পাণ্ডুলিপি পাঠাচ্ছেন তাদের জানাই, এগুলি পড়ে উত্তর দিতে অনেক সময় লাগবে। আমরা পরবর্তী কার্যক্রম ২০১৮ এর মার্চ মাস থেকে শুরু করবো। আমাদের বই করতে নুন্যতম ছয়মাস সময় লাগে। আমাদের প্রতিটি বইতে একজন সম্পাদক ও একজন শিল্প নির্দেশক কাজ করেন। কেবল মাত্র লেখার গুণমানই বিচার করা হয়, বই প্রকাশের জন্য কোনও টাকা আমরা নিই না। একটিমাত্র পাবলিক ফান্ডেড প্রোজেক্ট আছে, বিশদ জানতে দেখে নিন নিয়মাবলী www.lyriqalbooks.com এ। বইমেলায় যারা আমাদের সঙ্গে স্টলে ও অন্যান্য কাজে ভলেন্টায়ার সার্ভিস দিতে চান, দয়া করে মেলে যোগাযোগ করুন।


আসছে ‘এলাটিং বেলাটিং’ মেয়েদের কলমে মেয়েদের কথা। কেউ লিখেছেন মেয়েবেলার কথা, কেউ লিখেছেন ছোটবেলার কথা তো কেউ লিখেছেন ছেলেবেলার কথা। লিখেছেন ফেলে আসা ছোটবেলা, ছেড়ে আসা দেশ, শহর আর মানুষজনের কথা। লেখায় ধরা পড়েছে আমদের সময়, আমাদের দেশ, আমাদের স্বপ্ন।

দুই খণ্ডের সুবৃহৎ সংকলনে লিখেছেন, দেবারতি মিত্র, সত্যবতী গিরি, অনিতা রায়চৌধুরী, অঞ্জলি দাস, জ্যোৎস্না কর্মকার, কাবেরী বসু, স্বাতী গুহ, নবনীতা সেন, সঞ্চয়িতা কুণ্ডু, তৃপ্তি সান্ত্রা, মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া, সুমনা সান্যাল, ভাস্বতী রায় চৌধুরী, ঊর্মিলা চক্রবর্তী, পার্বতী ভট্টাচার্য, মিতুল দত্ত, দীপমালা গঙ্গোপাধ্যায়, বাসবী চক্রবর্তী, সীমা গঙ্গোপাধ্যায়, রিয়া চট্টোপাধ্যায়, গৌরী বসু, সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়, মধুপর্ণা মুখোপাধ্যায়, ঈশানী রায়চৌধুরী, ঝর্ণা বসু, চন্দ্রকণা সেন, চান্দ্রেয়ী বসু, মন্দার মুখোপাধ্যায়, সোহিনী দাশগুপ্ত্‌ রত্নদীপা দে ঘোষ, চন্দ্রানী বসু, যোষিতা, কিঙ্কিণী বন্দ্যোপাধ্যায়, মিলি সেনগুপ্ত, পঞ্চতপা, স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়িতা দাস, প্রজ্ঞাদীপা হালদার, সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়, ঊষসী ভট্টাচার্য, উজান ও আরও অনেকে। সম্পাদনায় অরণি বসু ও সামরান হুদা। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ- অ্যালেক্স সুশীলা।


৯ঋকাল বুক্‌স ভেবেছিল এমন এক প্রকল্পের কথা যেখানে বাঁধানো থাকুক হারিয়ে যাওয়া পুকুরঘাট, স্বপ্নের অনতিক্রম্যমাঠ, রাস্তাপাল্টানো নদীপথ, স্মৃতি সৌরভে পাড়া জাগানি্যা ধানচালগুলি। লেখা হোক এক বাসনাদেশের কথা, লেখা হোক অন্যচোখে ইতিহাস, চেখে দেখার কথা। এ আসলে ঘরে ফেরার গান। তাই এই সংকলন সকল খাদ্যরসিকের, এই সংকলন উদ্বাস্তুদের, এই সংকলন ব্জ্রাদৃষ্ট নাবিকের যে হারায়েছে দিশা। কেউ পেরিয়ে এসেছেছেন এক প্রজন্ম কেউ বা আরো বেশি, তবু উদ্বেল হয়ে আছেন উন্দাল-ভাবনায়, তরিয়েছেন ওদনসংস্কৃতির দিকচিহ্ন। কেউ শিলিগুড়ি কেউ ক্যালিফোর্নিয়া কেউ অশোকনগর কেউ বোকারো, ঘর, স্বপ্ন, ঘটি, মাটি হারানো মানুষেরা সহজেই গেঁথে তোলেন বহুদূরে ঘাই দেওয়া মাছগুলি, ছাইরঙা দেওয়ালে চুপ করে ঘোরানো সিঁড়ির মতো বাড়ে আহ্লাদের চইগাছ। ঘ্যাটকোল, খামআলু, সাতকড়া হয়ে পড়েছে সাতটি তারার তিমির। এ পরবাসে রবে কে? স্মৃতির সকল রানিমাছেরা একদা নিশিহ্ন হলে হলুদ কালো ডুরে পাড় শাড়ি মৎসকন্যারাও দেশ ছেড়ে চলে যান বরাবরের মতো। জিহ্বায় লালিত স্মৃতি-স্বপ্নের তর্জমা তবু বুঝি বিস্মরণে যাওয়ার নয়।

মধুমতি, রূপসা ও হরেক নাম মুছে যাওয়া শতেক নদীতে আজও ছেড়া পালে ডিঙা বয়েছেন, মনীন্দ্র গুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মনোজ মিত্র, বিভাস চক্রবর্তী, ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী, প্রফুল্ল রায়, মণীভূষণ বট্টাচার্য, সুজিৎ চৌধুরী, দিব্যজ্যোতি মজুমদার, মিহির সেনগুপ্ত, সদ্য প্রয়াত রবিশংকর বল, রঞ্জন ঘোষাল, অমর মিত্র, মনীষা রায়, সুনন্দা শিকদার, কিন্নর রায়, বাসুদেব ঘোষ, অমিতাভ মালাকার, রাজা সরকার, সুব্রত সেন, জয়িতা দাস, বিপুল দাস, সপ্তর্ষী বিশ্বাস, জাতবেদা মিশ্র, ঝর্ণা বসু, রঞ্জন রায়, সীমা গঙ্গোপাধ্যায়, রামকৃষ ভট্টাচার্য সান্যাল, রূপঙ্কর সরকার, মানসী বন্দ্যোপাধ্যায়, মনীষা মুখোপাধ্যায়, পারমিতা দাস, স্বাতী রায়, সোমা মুখোপাধ্যায়, কস্তূরী মুখোপাধ্যায়, কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাতী বন্দয়োপাধ্যায়, বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্য ও আরও অনেকে। নিচিহ্ন মাছগুলিকে আবার কেউ ছেঁড়ে দিয়েছেন জলে, কেউ আলপথে ডেকে ফিরছেন হারানো ধবলিকে, নানা দেশেকালের নানা প্রান্ত থেকে সাড়া দিয়েছে তারা। শিকার করা পাখিগুলি আবার কিচিরমিচির খেলছে দুই খণ্ডের প্রশস্ত বাতায়নে। টুকরো স্মৃতি-গল্পে হদিশ পাই, আলো জ্বলে, ঢেউ খেলে কর্ণফুলি-কংসে। চুয়াল্লিশটি লেখা দুই খণ্ডে সম্পাদনা করেছেন সামরান হুদা ও দামু মুখোপাধ্যায়। এঁকেছেন স্মারক রায়, নাম লিখেছেন পার্থ দাশগুপ্ত। এই ভাবেই জোড়াতালি পড়েছে মাঠঘাটস্মৃতিপুকুরে। এক যে ছিল দেশ। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। এ হল নতুন করে বুনতে চাওয়া ইতিহাসের তর্জমা, উদ্বাস্তু স্বপ্ন-স্মৃতি পুনর্বাসন প্রকল্প, রসনাস্মৃতির বাসনাদেশ।


আসছে আরও একটি সংকলন গ্রন্থ। চমকের জন্য দেখতে থাকুন আমাদের ফেসবুক পেজ ও এই ওয়েবসাইটের নোটিশবোর্ড।


বাংলাদেশ এক সময় ছিল পূর্ব বাংলা; ১৯৪৭এ ভারত ভাগ হলে পূর্ব বাংলা হয় পূর্ব পাকিস্তান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাল থেকে মানুষের দুঃখ-দুর্ভোগ শুরু, পূর্ব পাকিস্তানের কালে তা চরম আকার ধারণ করল সেখানে। এই সময় মানুষ পাক সরকারের ইন্ধনে বহু ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অত্যাচারের শিকার হয়েছে। অন্যায় শাসন শোষণ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর দাঙ্গা, হত্যা লুণ্ঠনের সঙ্গে সরকারের মদতে মহিলাদের উপর লাঞ্ছনা চলেছে । ধ্বংস হয়েছে অনেক কিছু,  সব থেকে বেশি নষ্ট হয়েছে সযত্নে লালিত সংসার,আর মেয়েদের নিরাপত্তা। জীবন যুদ্ধে তবু ঝাঁপিয়েছে তারা। নিজেদের হেঁসেল সন্তানসন্ততি গৃহপালিত প্রাণীদের রক্ষায় আবার যুদ্ধক্ষেত্রে এসে দাঁড়িয়েছে। এ যুদ্ধ ছিল জীবনপণ যুদ্ধ। ধ্বংসের ভূমিতে নতুন করে ফসল বোনার যুদ্ধ।  প্রতিটি গৃহের মা ছিলেন এই যুদ্ধক্ষেত্রের অতন্দ্র সৈনিক।

৯ঋকাল বুক্‌সের ‘ভাগফল ৭১, মেয়েদের কথা’ সেই সময় কালের দলিল।

সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন ঝর্ণা বসু। এতে আছে বাংলা ভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত লাঞ্ছিত, অবহেলিত, ধর্ষিতা মেয়েদের কলমে নিজের কথায় নিজের লড়াই। ১৬টি অসম্ভব জবানবন্দী লিপিবদ্ধ হল এই এই দলিলে। বাংলাদেশের সঙ্গে এই দেশের সম্পর্ক অটুট থাকল আরও একবার। এই বই সাজানো হয়েছে অকালপ্রয়াত অধুনা বিস্মৃত চিত্রগ্রাহক কিশোর পারেখের মুক্তিযুদ্ধকালীন তোলা কিছু আলোকচিত্র দিয়ে। এর প্রচ্ছদ চিত্র দিয়েছেন আর এক স্বনামধন্য চিত্রকর রঘু রাই। আমরা সম্মানিত।

 


অকপট কথায় অসীম রায়ের লেখা কেবল আত্মজীবনী নয়, এই বই আত্মউন্মোচনের হাওয়া  মোরগ। সুবৃহৎ দুটি খণ্ডে কলকাতার বুদ্ধিবৃত্তিচর্চার ইতিহাস, ষাটের দশক, সত্তরের দশক ও আশির দশকের জটিল মননের রাজনীতি লিখেছেন সুচারু কলমে। খুব নির্লিপ্তভাবে বলেছেন তাঁর কথা। যা তার করার কথাই ছিল না, সেই সাংবাদিকতা, প্রেম, কতিপয় স্বপ্ন প্রকল্পে এসে জোড়ে স্তাঁদাল, এলুলিয়র, বিষ্ণু দে, গৌরী শাস্ত্রী, য়্যালেক্সি টলস্টয়, গ্রাহাম গ্রিন। এই বই ভাবতে শেখার পাঠশালা, পায়ে হেঁটে পৃথিবী দেখার কেডসজুতো। এই বই উন্মোচন করবে, কীভাবে বাংলাগদ্য পাশ ফিরে শুচ্ছিল সত্তরে, সন্দীপন, শামসুর রহমান, দেবেশ রায়, হাসান আজিজুল হক, কৃষ্ণগোপাল মল্লিক, সৈয়দ শামসুল হকের নিত্য আনাগোনা। চিন্তাবিশ্বে আসছেন, হ্বিগেন্সটাইন, ফুকো ও দেরিদা। কবিতা পত্রিকা, সাহিত্যপত্র, চতুরঙ্গ ক্রমশ তুলে আনছে প্রাচীন চিন্তার সন্নিবেশ। পণ্য বিশ্বায়নের আগেই হাওয়া মোরগ ঘুরে গেছে নানা দেশ, ছুঁয়েছে সংস্কৃতির দিগন্ত।

৯ঋকাল নিয়ে আসছে অসীম রায়ের ‘জীবন-মৃত্যু’। এটি সম্পাদনা করেছেন সদ্যপ্রয়াত রবিশংকর বল ও কুশল রায়। দীর্ঘ দুই বছরের পরিশ্রমে দুই খাতা ভর্তি টিকাভাষ্য রচনা করেছেন রবিশংকর বল। যা আমাদের মনন ও চেতনার সম্প্রসারণ ঘটাবে। প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন কুশল রায়। টীকাভাষ্য কেবল লিখে নয়, আঁকা হয়েছে ছবিতেও। এই নির্মাণ প্রতীকের উর্ধে রচনা করে বেঞ্জামিন নির্দেশিত য়্যালিগোরির মেঘ। তার ফাঁকে ঝিলিক দিচ্ছে অন্য রবি। অসীম নীলাকাশে।


আমরা কাজ করি এমন কিছু বিষয় নিয়ে যাতে সময়টাকে ধরে ফেলা যায় সহজেই। রাজা সিদ্ধার্থকে বুদ্ধে রূপান্তরিত হতে দেখিনি, অশোক বলতে হাতে পড়ে আছে সন্তোষের শাহরুখ-করিনার সেলুলয়েডগাথা, আমাদের জন্য আছেন অবশ্য এক রাজকুমার, ধৃতিকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী। অসম্ভব খাদ্যরসিক ধৃতিকান্তের শিকারী থেকে সংরক্ষণপ্রয়াসী হয়ে ওঠার বিস্ময়কর ইতিবৃত্ত ধরা দিল ৯ঋকালের বইটিতে, ‘জঙ্গলগাথা ও রসনাবিলাস’ শিরোনামে। তার স্বাদু লেখনীতে ফুটে উঠেছে, দেশভাগ পরবর্তী ময়মনসিং, গারো পাহাড়ের বৈভব, সারা বর্ষাকাল জুড়ে ব্রহ্মপুত্রে মাছ শিকার, সরোবরগুলিতে পদ্ম ফুটে উঠলেই যেমন বন্দুক নিয়ে বেরিয়ে পড়া বিধৃত তার শরৎ শিকার স্মৃতিতে। দৈনন্দিন আহারের ঘুঘু, খরগোশ থেকে নানা জীব বৈচিত্র্যের  নিবিড় অনুসন্ধান তার লেখায় ফুটেছে বিস্ময়কর। জঙ্গলের অভ্যন্তরে যখন আলুও অমিল  তখন এক শজারু শিকারের রোমাঞ্চকর মরিয়া কাহিনি এসেছে তার যাদু কলমে যা বাঘশিকারের চেয়েও ভয়াল। আছে গ্রীষ্মকালীন শিকারে উড়িষ্যা ও বিহারের জঙ্গলের কথা।  ভারতের সমস্ত বন বাংলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ কথা লিখেছেন, আছে নানা রূপের জঙ্গল, অরুণাচল ও ডুয়ার্সের কথা। পড়লেন হাতির প্রেমে। কালে কালে বিস্তার লাভ করল জ্ঞানের এন্‌সাইক্লোপিডিয়া। একসময় সাউথ এশিয়ান হাতির বিশেষজ্ঞ শুরু করলেন, ‘গজ’ নামের বিখ্যাত পত্রিকা, যা ছাপা হয় শ্রীলংকা থেকে। ১৯৭২ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের মূল হোতা ধৃতিকান্ত, তারই পরিকল্পনার কুলিকে তৈরি হয়েছে পক্ষীর অভয়ারণ্য। এই বইয়ের প্রতিটি পাতায় ফুটে উঠেছে এক আর্তি। সবিস্তারে বিধৃত জীবনযাপনের দিনলিপিতে কিছুই লুকাননি এই ডাকাবুকো রসিক মানুষটি। যারা তার মা রেণুকা দেবী চৌধুরানীর আমিষ ও নিরামিষ খণ্ড পড়েছেন তারা বিস্মিত হয়ে দেখবেন, ময়মনসিংহএর কালীবাড়ি ও মুক্তোগাছার জমিদারবাড়িতে যা যা খাওয়া হত তা সত্যিই বিস্ময়কর।

এই বইতে আছে চারটি অংশ। মেজাজি শিকার, বন-জঙ্গল, গজশাস্ত্র ও রসনাবিলাস। এতে রয়েছে অধুনা দুষ্প্রাপ্য তার ধ্রুপদী বইটিও। আর রয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকায় নানা বার্ষিক সংখ্যায় প্রকাশিত তার অগ্রন্থিত লেখা। রয়েছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকায় লেখা বন সংরক্ষণ বিষয়ে প্রদত্ত বক্তৃতাসমূহ। যারা তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন, এমন সুস্বাদু কলমের শুরু থাকে শেষ বলে কিছু থাকে না। হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে গহীনে। বইটি সম্পাদনা করেছি আমি, সুমেরু মুখোপাধ্যায়, শিল্পী হায়দ্রাবাদ প্রবাসী শর্মিষ্ঠা বসু।


চল্লিশ বছর ধরে সন্দেশ পত্রিকায় বেরিয়েছে প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর। সত্যজিৎ রায়, সত্যেন বসু প্রমুখের প্রণোদনায় জীবন সর্দার ছদ্মনামে সুনীল বন্দোপাধ্যায় একটানা লিখে গেছেন আমাদের বাড়ির চারপাশের আরশিনগরের কথা । পাখি, পোকা, প্রজাপতি গাছপালা আর জীবজন্তুর আজব জগতের কথা। এম্প্যাথি তৈরি করতে চেয়েছেন শিশুর মনে এই প্রতিবেশীদের জন্যে। বার বার মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতির উপর এই যথেচ্ছাচারের ফল ভাল হবার কথা নয়। লিখছেন হাওয়াতে যদি বিষের ধোঁয়া মেশে আমরা তখন তখনই তার কুফল কতটুকু বুঝি! প্রাণী আর উদ্ভিদের শরীরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় তার পরিণাম। কিন্তু মহাকাশ থেকে তোলা ছবি দেখে বোঝা গ্যাছে পৃথিবীর হাওয়ার ভাল গুণ হারিয়েছে। যদি এ সব সত্যি হয়, তবে, পৃথিবী দূর থেকে সুন্দর হলেও কাছে থাকার মতো নয়। অথচ পৃথিবীটাকে, মানে প্রকৃতিকে আগামীর মানুষের জন্যে নির্মল বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

পৃথিবীর রূপগুণের কারণ প্রকৃতি। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যে কত নিবিড় সেই খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে। মানুষ প্রকৃতির একটি অংশ মাত্র, প্রকৃতির প্রভু নয়- এ কথাটি এত কাল কেউ মানতে না চাইলেও আজ বুঝি সেই সময় এসেছে। প্রকৃতি নিজেই একটি রাজনীতি। রাষ্ট্রের সঙ্গে বহুজাতিকের অশুভ আঁতাত বাধ্য করছে গ্রীন পলিটিক্স সম্পর্কে সচেতন হতে। তাই উরাল হ্রদের চেয়ে সোভিয়েত সেচ কিংবা সুন্দরবন ও তার প্রানীসম্পদের চেয়ে তাপবিদ্যুত কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এমন মনে করতেই পারেন ওয়াকিফহাল মহল। সুন্দরলাল বহুগুনার সেই স্লোগান “ecology is permanent economy”… অমোঘ। রাষ্ট্র একটি নিপীড়নকারী দমনমূলক যন্ত্র। রবি ঠাকুরের মুক্তধারা নাটকের যন্ত্ররাজ বিভূতির তৈরি যন্ত্রদানবের চেয়েও সাঙ্ঘাতিক। বারবার নিজের বৈধতাকে নিজেই চ্যালেঞ্জ করছে সে। আমরা নির্বাক দর্শক। কারণ আমরা আজও মনে করছি না এগুলো আমাদের ব্যক্তিগত সংকটের অংশ। শেষ নদীটি মজে যাবার পর, শেষ গাছটি কেটে ফেলার পর, শেষ মাছটি মরে যাবার মানুষ জানবে শুধু টাকা খাওয়া যায় না। সুতরাং এ লড়াই একান্ত আমাদের। আমাদের ঠিক করতে হবে কোন পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাবো আমরা। আমাদের ঠিক করতে হবে পৃথিবী নামের এই আশ্চর্য সবুজ গ্রহটাকে বাঁচাবার জন্যে একটা চমৎকার প্রতিবাদের শুরু আমরাই করবো কিনা। আমাদের বেঁচে থাকবার জন্যে একটা জমি না ছাড়া লড়াই লড়বো কিনা শীতঘুমে পাশ না ফিরে। আর সেই লড়াইয়ের হাতিয়ার করে সন্তানের হাতে তুলে দেবো কি না প্রকৃতি চেনার, প্রকৃতিকে ভালবাসবার এই সহজপাঠ।

৯ঋকাল বুক্‌স নিয়ে আসছে নিজেকে চেনার এই আরশি, জীবন সর্দারের ‘প্রকৃতি পড়ুয়ার দপ্তর’। বিস্তর লেখালিখি ঘেঁটে লেখাগুলি সমকালীন অবয়ব দিয়েছেন সম্পাদক প্রজ্ঞাদীপা হালদার। আসছে এই বইমেলায়। এই বইয়ের সমস্ত শিল্পকর্ম সত্যজিৎ রায় ও যুধাজিৎ সেনগুপ্তের।

 


কাহার লাগি এ মালা গাঁথি, কাহার তরে আলো? এ আসলে কোনও গুহামানবের লেখা সৃষ্টির মন্ত্র। প্রথম যখন আলো এসে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে তখন থেকেই জমতে থাকে স্মৃতি। দক্ষের সভায় একদা ডমরু বেজে উঠলে অস্থির হয়ে পড়েন মহাকাল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সতীর ছিন্নভিন্ন শব কুড়াতে কুড়াতে রচনা করি অস্থির সাগর, ভাসমান দ্বীপপুঞ্জ, কাঁটাতারে দংশিত মহাদেশ। ধর্মের ছাগলকে আদর করে ডাকি ক্ষিরি-দুগ্ধের আহ্লাদে, সে হতভাগা সাড়া দেয় কদাচ, বিবিধের মাছে দেখ মিলন মহান। সোনার তরীর কৌতূহলের নৌকায় শুয়ে অতীশ দীপঙ্কর অনন্ত জিজ্ঞাসার নদীতে পাড়ি দিয়েছেন অজানা চন্দ্রদ্বীপে। জেনেছেন বাইনারির মতো, একদিকে বরিশাল ও অন্যদিকে ধরিত্রীর বাকিটুকু। এইভাবেই সন্ধ্যা নেমেছে কতকাল আমাদের ঘরে শব্দের প্রজাপতি উড়েছে সান্ধ্যভাষার মতো, এত ঝঞ্ঝা ও কোলাহল বুকে নিয়ে কাহ্নপাদ তখনই কুপি জ্বালিয়ে মানচিত্র আঁকছেন, বৈশালী পাটলিপুত্র এথেন্সের। পিঠাভাজার গন্ধে ম ম করছে সমস্ত রূপকথার উপকূল। মৌসুমি বাতাসে তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বেহুলার ঘুঙুরের শব্দ, এ যাবৎ দেশান্তরী খঞ্জনার প্রপিতামহের ঋণ আকাশে দাগ কেটে উড়ে যায় যুদ্ধের জেটবাহাদুর। আকাঙ্ক্ষার পাহাড়ের সানুদেশে একাকী ঋষি খস খস করে সই করছেন তুলটের ব্ল্যাঙ্ক চেকে, কামনা বাসনার গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে আওড়াচ্ছেন মনুষ্য জন্মের গূঢ রহস্য বিরোধাভাস শ্লোকসমূহ, এক্ষণে প্রবাসী এক থিয়েটারকর্মীর প্রবেশ, আপাতত সে এক কলমচি গণেশের ভূমিকায় কেবল। বাজিকরের মতো শ্লোক কুড়ায়, আপাতত সেগুলো তুলে রাখা তার কাজ, তাই রচনা হয়েছে নানা রংবেরঙের সিন্দুকের, এইভাবে ছাপা হয় বইটই। নানা কাতাবি নামে মধু রাখার জন্য বিশ্বকর্মা বানিয়ে দিয়েছেন মৌমাছি চাষের মতো বাক্স, সেগুলি আপাতত ছড়িয়ে রবীন্দ্রনাথের সামনে খুলে রাখা মানচিত্রের উপর। এম্বিধ কোনও বাক্সে লেখা বেদ, কোথাও উপনিষদ, অন্ধকারে ঠাওর হয় না প্রবল, কোরান, গুরু গ্রন্থসাহিবও আছে সম্ভবত। এই ভাবেই গড়ে উঠেছে এক অজানা উড়ন্ত বই। যেখানে অবিশ্রান্ত জ্ঞানের পিপাসা নিয়ে ভীষ্ম শুয়ে আছেন অসংখ্য বিস্ময়সূচক চিহ্নের উপর।

রঞ্জন ঘোষালের ‘অজানা উড়ন্ত বই’ রম্য প্রবন্ধের সংকলন। ৯ঋকালের আয়োজনের মৌতাতে আছে তিরিশ বছর আগে দেশ পত্রিকায় লেখা বাঙালির ব্যাঙালোর থেকে শুরু করে এ যাবত যত রম্য গদ্য লিখেছেন তার সংকলন। আছে ‘বেশরমের পরণকথা’ যার একটি অংশ ধারাবাহিক বেরিয়েছিল একটি রবিবাসরীয় পত্রিকায় ‘পথে প্রবাসে’ নামে। আছে সাড়া ফেলে দেওয়া ‘অনুস্মৃতি’। আছে তার ‘বিস্মৃতি সমূহ’ও। ডি এ নের মতো ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকেন অভিযাত্রীর দল, এই ভাবেই বয়স বাড়ে আর আমরা স্মৃতিভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ি পাতায় পাতায়, এখানেই আছে পারমাণবিক বোমার দীর্ঘশ্বাস লুকানো প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র, আছে ‘মহীনের ঘোড়াগুলির অশ্রুত কথা’ ধুর্জুটি রহস্যের ঘোরানো সিঁড়িতে সেখানে সহসা এসে পড়ে চাঁদের আলো, আছে সুখাদ্য আয়োজন রসনাসরিকের ‘রম্য রসনা’য় এবং যার ঘ্রাণের সব এলোমেলো তাই কী নেই তাও ঠাওর হয় না সহসা। সৃষ্টির যাবতীয় রহস্যের অনুসন্ধান যার একমাত্র বিধেয়। সৃষ্টির মূল মন্ত্র খুঁজতে বারে বারে বেরিয়েছেন ধ্বংসের অনিবার্য পথে। সরস ভঙ্গিমাটি তিনি এঁকেছেন সৈয়দ মুজতবা আলির কলম দিয়ে, কবে কোথায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন জিজ্ঞেসা করবেন, সে আর এক ধাঁধার গল্প। কিছু ধাঁধাকে গল্পে রূপান্তরিত করেছেন শিল্পী শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায় তাই এই বই ছোঁয়া যায়, দেখা যায় ও পড়া যায়। যত্ন সহকারে চক্ষু পরীক্ষা ও দাঁত বাঁধাই করানোর জন্য ‘অজানা উড়ন্ত বই’ নির্বিকল্প।


হিরণ মিত্র তুলে দিলেন, জীবনের সঞ্চয়, স্মৃতিভাষ্য ও সময়ের কোলাজ— ঝরা সময়ের কথকতা। যে মানুষগুলি ঘিরে আছে সময় হয়ে তাদের নানা আঁচরে বিদ্ধ করেছেন আজীবন, এইবারে কলমে জুড়লেন তাদের। এর শুরু জীবনানন্দ- রামকিঙ্করে আর এই মহাভারত কথন শেষ হয়েছে দেবশঙ্কর হালদারে। আছে অজস্র মুছে যাওয়া মুখ, সরে যাওয়া ছবির মালা, আলো, রং ও মায়া নিয়ে খেলা করা সব যাদুকরদের কথা, আছে মহীনের মায়া ও নানা বেলা শেষের গান।

 

 

 

 


৩ মার্চ ১৯৬৭ দার্জিলিং জেলার তরাই, পূর্ববঙ্গ ও নেপালের সংযোগস্থলে তিনজন ভাগ চাষী লাপা, সঙ্গু ও লতিয়া কিসান সিপিএম এর জেলা কমিটির নেতৃত্বে লাঠি ও তীর ধনুক হাতে জোতদারের গোলা থেকে লুঠ করল পঞ্চাশ মণ ধান। সঙ্গী হল আরও আরও একশো পঞ্চাশ জন। স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ল, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া। নেতা কানু সান্যাল বললেন এ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের শুরু। পিকিং রেডিও থেকে ভেসে এল, মাও বলেছেন একটি স্ফুলিঙ্গ দাবানল সৃষ্টি করতে পারে। স্ফুলিঙ্গরা অবশ্য তখন কেউ শিক্ষারত, কেউ চাকুরির ঘেরা টোপে। নির্ঘোষ ঘোষিত হতেই বসন্তের ফুলগুলি ঝরে পড়তে লাগল টুপটাপ। রক্তের তুফান ছুটল। মুখপত্র হিসাবে দেশব্রতী, লিবেরেশন ও লোকযুদ্ধ প্রকাশিত হতে লাগল নিয়মিত। কেউ স্বনামে কেউ বেনামে লিখতে লাগলেন, আর একদল যুবক যুবতী হাতে হাতে বিলি করতে লাগলেন সেই সব স্ফুলিঙ্গ। কেউ স্বেচ্ছায় কেউ পরিস্থিতির চাপে হয়ে পড়লেন অন্তর্গত। অজান্তেই জার্ণাল ধর্মী যুক্তি প্রবাহ ঠাঁই নিল বাংলা গদ্যে। রক্তে রাঙা হল বাংলার মাটি।

দিশাহীন এক উদ্বাস্তু মিহির সেনগুপ্ত তখন ঠাঁই নিয়েছেন হুগলী নদীর পারে ভদ্রেশ্বরে, চারপাশে জুটমিল, শিফট ভাঙার ভোঁ হয়ে মানুষ হেঁটে যায় পিঁপড়ের মতো। মাথায় ক্ষতবিক্ষত বিষাদবৃক্ষ লুকিয়ে, দেখছেন যুবসমাজ সর্ব সুখ ত্যাগ করে বেড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়, এভাবেই স্ফুলিঙ্গেরা শ্রমিক কৃষক সকলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেখতে শুরু করে বদলে দেওয়ার স্বপ্ন। উচ্চশিক্ষা না নিয়ে ব্যাঙ্কের চাকরি আর এইগলি সেই গলি ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া চিরকুট বা পার্টির মুখপত্র। এই ভাবেই জুটে যায় জেল হাজত। সে আর এক জগৎ আবিষ্কার, আত্মহনন আর রাজসাক্ষী হওয়ার টানা পোড়েন, পুরস্কার নিষ্ঠুর থার্ড ডিগ্রির যাপন। সত্তরের দিনগুলিতে চারপাশে মৃত্যু ধীর লয়ে হেঁটে যায়। ‘কালচক্রযান’ এক বরিশালীর স্বপ্নভঙ্গের জবানবন্দী। বলশালী না হয়ে উঠতে পারার হতাশা আর গ্লানিতে ক্ষোভ কোথাও যেন লুকিয়ে থাকে তবুও। নকশাল আন্দোলনের পঞ্চাশে ৯ঋকালের সংযোজন মিহির সেনগুপ্তের জবানবন্দী ‘কালচক্রযান’। সম্পাদনা করেছেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়। সত্তরে জন্ম নেওয়া এক শিল্পী সৌমিক চক্রবর্তী তার দায়দাগ লিপিবদ্ধ করেছেন ছবিতে।


শীতের শুরুতে শরবত আলিকে দেখা যেত হাঁস নিয়ে ফেরি করত সিলেটের ঢেউ খেলানো রাস্তায়। গ্রামের বাড়িতে একাকী অজাবি নিজের হাতে বুনে যেতেন সবজির বাগান, এরাই তার কথা বলার সঙ্গী- সিম উঠত লতিয়ে, সরু সরু বেগুনেরা অপেক্ষা করত ভিনদেশী রাজকুমার ইলিশের জন্য গাছে গাছে, স্তনভারে টমাটোরা উসকে দিত নিভৃত যৌনচেতনা। এক কিশোরী অপেক্ষা করত কেবল পরের ঈদের জন্য, এইবার বড় হবে সে, ছেলেদের মতো পকেট দেওয়া শার্ট পরে চাঁদ রাতের আগের দিন হারানো জুতো খুঁজতে খুঁজতে সিন্ডারেলা হয়ে যাবে সে। দুপুরে নিভৃতে জিভের সঙ্গে আলাপ জমাত অষ্টগ্রামের পনীর। আব্বাকে একদা সে দেখেছে কুড়াল নিয়ে অতিবৃহৎ শুটকি মাছ কাটতে, আর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি নামলে শীতের বাগানে, বন্দুকের আজয়াজ শোনা যেত আর দাওয়াত পৌঁছে যেত টেলিফোন ঘুরিয়ে সকলের কাছে। আর ছিল, ধান পাহারা দেওয়া শীত নাড়া জ্বালিয়ে হুঁকা নিষিদ্ধ প্রহরের গল্প। এইভাবেই সে বড় হয়, একদা বন্দী হয় অন্তঃপুরে, খেতখামার, রূপকথা ভেসে ওঠে ভাতের থালায় কখনো বা নকশি কাঁথায় কাঁদে। পিঠাশিল্পী মেজফুফুর ডাক পড়ে গ্রামের বিয়ে জেয়াফতে, মড়মইড়া পিঠার গায়ে ফুটে ওঠে অভিমানী অঘ্রাণ। বারান্দার সারি সারি মেয়েরা বসেছে ছরতা হাতে, সুপুরি কাটা হচ্ছে তালে তালে আসলে মেয়েলি গানে তখনও চলছে জগতকে চেনার নির্বিকল্প পাঠ। দারগিঝির হারানো হেঁশেলনামা দেখতে দেখতে নানা চিত্রকল্প ঢেউ খেলে সেই কিশোরীর মাথায়, একদা প্রবাসে সামরান লিখতে থাকেন ‘পিয়ুরসালার’ মতো হারিয়ে যাওয়া স্বাদ-স্মৃতি-গন্ধের বাংলাদেশ।

বছর দুই অমিল থাকার পর আবার নতুন ভাবে মুদ্রিত হতে চলেছে ‘অতঃপর অন্তঃপুরে’। বছর দুই আগে ইতালিতে বসে এই বই পড়েছিলেন এক শিল্পী। তিনিও বাংলাদেশি, কাজেই চিত্রকল্পের মেঘ সহজেই পার হয়ে যায় দেশের সীমানা এমনকি ‘জেন্ডার’ নামক কৌটায় ভরে রাখা প্রাণভোমরা খোঁজে বুনতে থাকেন স্মৃতি। সমুদ্র অতলের সেই স্বাদ এই সংকলনে মুদ্রিত হচ্ছে এই শীতে একত্রে। বর্তমানে ইংলণ্ডে বসে চন্‌দন শফিকুল কবীর ছুঁচ সুতোয় বুনে দিয়েছেন কথনশিল্পের ঢঙে কিভাবে ফুটে ওঠেন কথক- যাকে আদ্রকে করে নিজস্বী বলে ডাকি ইদানীং, আমরা বিস্ময়ে দেখি সময় কিভাবে যাত্রা করে বাটিকের আঙিনায়, প্রবাসের টুকরো স্মৃতির মতো বাংলাদেশ ধরা থাকে খণ্ড খণ্ড সাজানো অ্যাপ্লিকে। সব বই বই নয়, কিছু কিছু বই।

 


স্বধর্মে নিমজ্জিত বাঙালি বড় কৌতুক প্রিয়। আলি সাহেব থেকে রাধাপ্রসাদ আপাতত আসর জমিয়েছেন এখানে, এন সি সি ক্যাম্পের ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ গোত্রের কঠোর সমালোচনা আত্মবিস্মৃতের মতোই কিঞ্চিত যত্নবান। সুতরাং বেশুমার খেউড়-গল্পের উত্তর কলকাতা সমস্ত জরাজীর্ণ বলিরেখার গলিঘুঁজি নিয়ে উড্ডীন। তবে এ নেহাতই কেতাবি চর্চা, তাই কল্যাণী দত্ত থেকে সুভো ঠাকুরের বই পড়ুয়ার ঠেকের জাবরদানি বিশেষ। পরম সুখের এই যে আমাদের লুক্কায়িত টনকটিকে ঝনক ঝনকে রূপান্তরিত করতে উদ্যত এই বই। এই প্রহসনমালা এক কথায় সুমনের গানের মতো, আমাদের প্রথম সব কিছু। যদিও ডুবিবার উপক্রম হইলে ভেনিসসঙ্কুল দিনে হাত ধরেন কান্ত কবি, রবিবাবুর কথা যত কম বলা যায় জাতির মঙ্গল, টুকরো করে কাছি বলেই থেমে যাওয়া ভাল, এটাও যদি বুঝতেন। আছে হরতন রুইতনে সাজানো দেশ ও ক্যালিফোর্ণিয়ার হোটেলগুচ্ছ, এই মহাগ্রন্থ ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারক বাঙালির কুড়েমির গাথায় নতুন সংযোজন। এই বই হাতে থাকলেই তীর্থ, পড়লে পরমার্থ। শ্রী সম্বিৎ বসু প্রণীত ‘আপন বাপন জীবন যাপন’ নিয়ে হাজির হচ্ছে ৯ঋকাল বুক্‌স। পাতায় পাতায় লেখকের বর্ণনার বর্ণ রঞ্জিত করেছেন শ্রী ভাস্কর হাজারিকা। বইটি সম্পাদনা করেছেন কণিষ্ক ভট্টাচার্য।


এই বই বিষণ্ণতার কুয়াশায় মোড়া এক জনপদের আত্মকথা। সীমান্তবর্তী এক মফঃস্বল তার সমস্ত মুদ্রাদোষ নিয়ে ডালি সাজিয়েছে এক বিষাদবিধুর ছোটবেলা, যৌবনে আলোড়িত সত্তরের দশক- মুক্তির দশকের সন্ত্রস্ত রিফুজিরা স্বাদ-গন্ধ সহসা বদলে দিলে ইচ্ছাময়ী ইছামতী লীলাক্রীড়ায় গুটিয়ে নিচ্ছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দ্বীপগুলি। এইভাবেই হারায় মেয়েটি তার  প্রিয়জনদের। সে শিখেছে এই সমস্ত টুকিটাকি ওঠাপড়া যেন সহজে গায়ে না লাগে। সে বড় হওয়ার আকাঙ্খায় মুখ লুকায় বাংলা সাহিত্যের পাতায় পাতায়, কিন্তু আকাশে তখন থমকিয়ে ছিল মেঘ। সুতরাং আসে মেঘদূতম, গাছে আসে নতুন পাতা ও প্রেম।

ছেলের আকস্মিক প্রয়াণে মা, লিখতে শুরু করেন তার না বলা যত একরত্তি জীবনের গল্প, টুকিটাকী কুজ্ঝটিকা। এক পৃথিবী লিখতে লিখতে তার দৈবী ভোর হলে উন্মীলন হয় দিব্যচক্ষুর, দশখানি হাত হয় তার। দেখেন গাছেরা ক্রমাগত লিখেছে, নতুন পাতা কুড়ি ও ফল। নদী লিখেছে তার অগণিত উচ্ছ্বাস আর ঢেউ, জাল টপকানো মাছেদের গল্প, ইতিউতি জেগে ওঠা এইসব মাছরাঙা দ্বীপ। তবুও এই লেখা চরম হতাশার,না খেয়ে চুরি করতে শেখার মতো সত্য আবিষ্কারের, উঠে যাওয়া মার্টিন কোম্পানির রেললাইন ডিঙানো নিষিদ্ধ জগত, কাদায় মোড়া সংসারে দারিদ্র্যের দুই ফোঁটা তাজমহল, উজ্জ্বল সম্ভাবনার বিনাশের, অজস্র মৃত্যুর ললাটে কুঞ্চিত ব্যর্থতার কুন্তলদাম। বিষণ্ণতার বিধুর রঙে রাঙানো এই লেখা এক একাকী বয়ে চলা নদীর, যাতে ভেসে যায় লক্ষ্মীন্দর আজও কলার মান্দাসে, মমতাময়ী মা তার উপর মশারি বিছিয়ে দিয়েছেন কেবল, টানটান। ৯ঋকাল বুক্‌স নিয়ে এসেছে সীমা গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘টুকিটাকী কুজ্ঝটিকা’। পাতায় পাতায় দীর্ঘশ্বাস ও বেদনাকে সাজিয়েছেন প্রণবেশ মাইতি।

 


বিপুল দাস আত্মকথা কথা লিখলেন ‘তরঙ্গ মিলায়ে যায়’। যা আগে কোথাও প্রকাশ হয়নি। এই লেখা অনিঃশেষ। তিস্তা মহানন্দা আর ক্রমশ বড় হতে থাকা শিলিগুড়ির গল্প। জঙ্গলে একলা পাতা পড়ার কথা, উত্তুরে হাওয়ার শিরশিরানি আর কিছু ডাকনামের দল, যা নিভৃত গোপন। নকশাল আন্দোলনে এলাকা উত্তাল। বন্ধু বিচ্ছেদ হয় বুলেটে। রেলের কাঠের স্লিপার চুরি যায়, মাথার চুলের মতো পাতলা হতে থাকে চারপাশের জঙ্গল। এনজিপি স্টেশন তৈরি হলে কমে যায় শিলিগুড়ি স্টেশনের গুরুত্ব, উঠে যাচ্ছে একরত্তি আড্ডার ঠেক, বইয়ের দোকান। তবু তারই মাঝে একদিন স্টেশনে এসে দাঁড়ালেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই বইয়ের অনেকটা জুড়ে চা বাগান, দূরে আঁকা পাহাড়। সুতরাং লেখালিখি ও অশ্রুকুমার শিকদার। আছে প্রথম গল্প ‘অ্যান্টিবায়োটিকে’এর কথা। পাহাড়তলি পত্রিকা ও লালনক্ষত্রের কথা। সময়ের বিপ্রতীপে, বাংলা সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র থেকে বেশ কিছুটা দূরে বসে বিপুল দাস কেমন করে হয়ে উঠলেন বর্তমান বাংলা সাহিত্যের এক প্রতিনিধিত্ব মূলক গদ্যকার। আছে প্রিয় লেখক, প্রিয় গল্পের কথা, আর দিগন্তজুড়ে ক্ষয়ের বহুতল কেমন করে ছিনিয়ে নিচ্ছে ভাষা। ভালবাসেন জঙ্গলে ঘুরতে আর সেতার বাজাতে। তবু আজও তার ‘কবিতা লিখতে ভয় করে’। ৯ঋকাল বুক্‌স নিয়ে আসছে চেতনা উন্মোচনের এই অবশ্য পাঠ্য ‘কবিতা লিখতে ভয় করে’। পাতায় পাতায় ভয়ের কারণগুলি চিহ্নিত করেছেন শিল্পী অরিন্দম মান্না। বইটি সম্পাদনা করেছেন কবি ও গদ্যকার সম্বিত বসু।


কেউ গায় ঘরে ফেরার গান। কেউ বলে মন আনচান গান শোনাবে সুদূর পরাহত কোনও বিকেলবেলায়। সমস্ত বিলাপ বসন্তের, আর সব ‘পবিত্র’ কাল্পনিক। ছেঁড়া জুতো আর ক্যাম্বিসের বল এইটুকু সম্বল কবি অবশ্য বলেই খালাস, কেউ ব্যথা রাখেনি। তাই আজ বিস্ময়ের রুলটানা জগৎ যতদূর দেখা যায় ততদূর বিস্তৃত শৈশবের জলছবি। লজিকের গেরো নেই, টক-ঝালই আদর্শ ও ঝুরোঝুরো নীতিশিক্ষার জলদগম্ভীর মেঘ। রাজবাড়ির থামের মতো নিরেট বই এর জগৎ, ট্রেনের জানালা আর ডাকটিকিটের তকমায় সাঁটা ইংলন্ড লেটারে আমাদের কল্পজগতের ইকেবানা। তারই মাঝে আছে সে এক দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।

একমুঠো কিশোরীবেলার ঝরা বকুলে সাজানো সুচেতনা দত্তের ‘লোটন মটন পায়রাগুলি’ কেউ ডানা ঝাপটায় অকাতরে, কেউবা চিবিয়ে ফেলেছে ব্যাকরণ কৌমুদী। এই অবান্তর লেখালিখির সব বাড়িগুলিই রঙিন রূপকথার, কোনটি স্কুলবাড়ি, কোনটি হেতমপুরের রাজবাড়ি। সরগরম করা একান্নবর্তী পরিবার, পালা-পার্বণে এক হওয়া নানা আব্বুলিশ আছে স্ট্যাচু হয়ে।  সব মানুষেরা নেমে এসেছেন ক্ষণিকের বাস্তবে, রুপালিপর্দাই বুঝি তাদের আপামর ঠিকানা। এতে আছে রূপকথার উত্তর কলকাতা, কবিদের রূপসী বাংলা, ভীমরতিপ্রাপ্তের ভারতবর্ষ ও মাটনান্তকর এক পৃথিবীর কথা। এই বইতে আছে তালপুকুরে চাঁদের ছায়ায় অশরীরীর তালজ্ঞানহীন রসিকতা, হাবুদের ডালকুকুরের তাড়া খাওয়া দিকভুল করানোর ডালপালা মেলে দেওয়া রাস্তার ভ্যাঁ। তাই এই বই জীবনকে জানার আদর্শলিপি, মানুষকে চেনার সহজপাঠ। আর এই তালকাণ্ডহীন খোরাকগাথায় ইন্ধন জুগিয়েছেন শিল্পী উপমা চক্রবর্তী। তাই বাড়িগুলোতে নেমে এসেছে অকাতর চাঁদের আলো, ঝুপ করে পেরিয়ে যাওয়া মাঠে আজও চক্কর কাটে স্বপ্নের লাল টুকটুক বাই সাইকেল। এই সব ভুলে যাওয়া শৈশব, এ যাবত হারিয়ে যাওয়া জুতো, সুগন্ধি রবার, বেঁকে যাওয়া কম্পাস, মেলায় কেনা বাঁশি, ছোট হয়ে যাওয়া জামা, শুকিয়ে যাওয়া লিপস্টিক, এক মশারি মন কেমন সব ফুটে উঠছে পাতায় পাতায়। পড়তে গেলে সাদা দেওয়ালে ফুটে ওঠে আঁচড়ের দাগ। দীর্ঘশ্বাস বলে, একটু কেঁদে ঠিক হালকা হয়ে যাবো একদিন, বড়দের মতো বলবো, শৈশবে আর ফেরা যায় না কি? হারিয়ে গেছে সে দেশ।

 


মহাকবি উডি অ্যালেন তাঁর ‘ক্রাইম ও মিসডেমিনার’ মহাকাব্যের এক চরিত্রকে দিয়ে বলিয়েছিলেন, কমেডি হল এমন একটা ভয়ানক কষ্ট যেটার বেশ বয়স হয়েছে। ব্রেকআপের দুদিন আর দু-বছর পরের কথা ভাবুন। যুগপুরুষ স্টিভ কাপলান বলেছেন, কমেডি হল একটা চেষ্টা। ভীষণ সাধারণ একটা মানুষের, সমস্ত রকম বাধার বিরুদ্ধে, কোনওরকম পারদর্শিতা, জ্ঞান, বোধ, ছাড়া আপ্রাণ জেতার চেষ্টার নাম কমেডি। এই যে আপনি সেই কবে থেকে মনেপ্রাণে আধুনিক হতে চাইছেন? পারছেন? কিন্তু চেষ্টাটা থামাচ্ছেন কি? আবার কে যেন বেশ একটা বলেছিল, আমরা কোনওকিছুকেই (সেটা মানুষ, ইয়েতি, চ্যবনপ্রাশ যাই হোক না ক্যানো) তার মতো করে দেখি না। নিজের মত করে দেখি।

তেমনই এ বইয়ে, বহুদিন ধরে হাজার জমা কষ্ট (যেমন চেহারা, অ্যাসিডিটি, কিছুতেই ক্রিকেট ভাল না বাসতে পারা, দাড়ি না ওঠা, কবিতা লিখতে না পারা, সোজা উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, কেউই সিরিয়াসলি নিতে না চাওয়া, সবাই অংসখ্য প্রেমিকা আছে ভাবা সত্ত্বেও তিন বাল্যবন্ধুর সাথে স্টার ওয়ার্স দেখে উইকেন্ড কাটানোর মত সিঙ্গেলত্ব, বেশিরভাগ মিষ্টি ব্যাপারের রুড ঠাওরে নিয়ে কথা বলতে না আসা, ইত্যাদি প্রভৃতি প্রচুর) সম্বল করে, দু-পকেটে হাত আর দু-কানে হেডফোন গুঁজে চারপাশ দেখা হয়েছে বহুকাল ধরে। ফলে সবার ওপর উডি অ্যালেন সত্য তাহার উপরে সাইফাই। যৎপরোনাস্তি ভেল্কির গুণে ভাষাচর্চাই হয়ে উঠবে বই। তাই এযাত্রা নিছক ড্রামা।

বইটার নাম হওয়ার কথা ছিল ‘যারা ড্রামা হতে চেয়েছিল…’, কিন্তু ঘুম উঠতে দেরি হয়ে যাওয়ায়, পথে গাড়ি ঘোড়া কিচ্ছুটি না পাওয়ায়, একে ওকে জিজ্ঞেস করতেই হল

– দাদা উচ্ছন্নে যাওয়ার রাস্তাটা কোনদিকে?

সবাই অবশ্য এতে ইয়ার্কি দেখল, দেরি দেখল। স্বপ্নে দেখা করতে চাওয়ার মেসেজ পেয়েও রিপ্লাই দেওয়ার আগেই অ্যালার্ম কল্যাণে ঘুম ভেঙ্গে গ্যাছে।

আপাতত শান্তিকল্যাণ হয়ে আছে কমেডি। আসছে সৌমিত দেবের ‘উচ্ছন্নে যাওয়ার রাস্তায়’। বইটির সম্পাদনা করেছেন সম্বিৎ বসু। শিল্লপকর্ম করেছেন, ঋতুপর্ণ দাস, তারকাটা লেফ ও পার্থ দাশগুপ্ত। বুক আর্কিটেক্ট সায়ন্তন মৈত্র বোকা। নতুনের সন্ধানে ৯ঋকালের সুলুক, উচ্ছন্নে যাওয়ার রাস্তাতেও আশার ঝিলিক।


নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র যেমন বলেছিল, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’, ব্রেরা-র ফুটবল-সূত্র বলছে, ‘প্রত্যেক মুভেরই একটি কাউন্টার মুভ থাকে।’ এ ছাড়াও ব্রেরা বলেছিলেন, ‘প্রতিটি আক্রমণাত্মক কৌশলের থাকে রক্ষণাত্মক প্রতিফল (defensive nemesis)’। ফুটবল-বিশ্লেষণ শুরু হয়েছিল তাঁর হাতে, তাঁর লেখায়। তাঁর মতো করে ফুটবলকে এভাবে বিশ্লেষণ তখনকার দিনে আর কেউ করেননি। তাঁর দেখানো পথ ধরেই আজ ফুটবল বিশ্লেষণের এই রমরমা যা এখন আর সীমাবদ্ধ নেই শুধুই কোচদের ব্ল্যাকবোর্ড বা ল্যাপটপে। ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি মিডিয়া-হাউসে। এতটাই সুদূরপ্রসারী ছিল জিয়ান্নি ব্রেরা-র প্রভাব।

যখন ক্রিকেটই আমাদের ন্যানোজেন ১,২,৩,৪ এবং মশারির ছিদ্র অধিক বেশি প্রিয় ও  পরিচিত দুসরা, সইলই পয়েন্ট ও গালি, তখনও কলকাতা ডার্বি আইএস এল আর বিধাননগরে বসানো ভুঁড়িওয়ালা ঘূর্ণির পুতুল নিয়ে সরগরম ফেসবুক এবং সাউথ আফ্রিকার দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ সেই সুবাদে পেয়ে যাব গান্ধিচর্চার অবাধ সুযোগ। সুতরাং ৯ঋকাল নিয়ে আসছে কাশীনাথ ভট্টাচার্যের ফটবলের জেন্দ আবেস্তা– গোল্লাছুট। এটি সম্পাদনা করেছেন বাগবাজারের কবি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বছরে আমরা আনতে চলেছি মাত্র কুড়িখানি বই। সব বই বই নয় কিছু কিছু বই।

যে বইগুলি অর্ডার দিতে পারছেন- পাখালিনামা- রূপঙ্কর সরকার, স্বাদ সঞ্চয়িতা- সামরান হুদা, খ্যাটন সঙ্গী- দামু মুখোপাধ্যায়, সাত ঘাটের জল- শঙ্খ কর ভৌমিক, আইটি আইটি পা পা – যোষিতা, সুরের গুরু আলাউদ্দিন খান- শোভনা সেন ও রমণীয় দ্রোহকাল- রঞ্জন রায়। বিশদ জানতে চোখ রাখুন ওয়েবসাইটে www.lyriqalbooks.com। আমাদের বই পাওয়া যায় কলেজ স্ট্রিটের সর্বত্র, দেজ, ধ্যানবিন্দু অভিযান, দে বুক স্টোর, দক্ষিণে ক্যাফে কবীরা, ফার্স্ট ফ্লাশ, ঢাকার বুবুক, চট্টগ্রামের বাতিঘর, লন্ডনের রূপসী বাংলায়। অন লাইনে অ্যামাজন ইন্ডিয়া, বইচই ডট কম ও বাংলাদেশে নোকতা আর্টসে।