সাল ১৯৫৫। এলাহাবাদ ব্যাংকের চাকরির পরে আর কলকাতা পুলিশে তিন বছর পুলিশের উর্দি পরে কাটানোর পরও উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিলেত যাওয়া। কস্ট অ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে। স্মৃতির ভাঁড়ার পেছনে ফেলে রেখে কলকাতা থেকে বম্বের ট্রেনে চেপে শুরু এক স্বপ্নময় যাত্রা। আরব সাগর থেকে ভারত মহাসাগরের সুনীল জলরাশি পেরিয়ে লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর হয়ে শেষ পর্যন্ত ইউরোপ। এরই মাঝে ইঞ্জিনের গর্জনে উছলে ওঠা জলের ঢেউ আছড়ে পড়েছে কত কত বন্দরে— করাচি, এডেন, পোর্ট সৈয়দ, নেপলস! জাহাজের আপ্যায়ন, বন্দরনগরীর লোকেদের অভ্যর্থনা, প্রবাসযাত্রার বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভাঁজে ভাঁজে মিশে গেছে কৈশোর ও যৌবনের স্মৃতিকাতর পঙক্তিমালা। জাহাজের পানশালার গল্পের সঙ্গে মিশে গেছে গ্রামের পাঠশালার কথকতা; প্যারিসের রেলপথের সঙ্গে হয়েছে সুয়েজ খালের নিস্তব্ধতার কাব্যিক মিতালি। নতুন অজানা যাত্রাপথের রোমাঞ্চ ও ফেলে আসা জীবনের টানাপোড়েনের বুনোটে গাঁথা এই জলতরঙ্গ।
মণীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম ১৯২৮ সালের ৩০ এপ্রিল। অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলার বন্দরখোলায়। চপলাসুন্দরী দেবী ও অমরনাথ গাঙ্গুলির একমাত্র সন্তান। ১৯৪৪ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন মাদারিপুরের স্কুল থেকে এবং ১৯৪৪ সালের মে মাসে কলকাতায় আসেন পরবর্তী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিকম ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি কাজ নেন এলাহাবাদ ব্যাঙ্কে। কয়েক বছর পর পেশা পরিবর্তন। কলকাতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে বিলেত যাত্রা কস্ট অ্যাকাউন্টেন্সি পড়তে। লন্ডনে ছাত্রাবস্থায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের নিমন্ত্রণে জহরলাল নেহরুর সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ ও মত বিনিময়। উচ্চশিক্ষান্তে লন্ডনেই ব্যাঙ্কে চাকরি করেন বেশ কিছু বছর। মায়ের টানে দেশে ফিরে আসা। জিইসি লিমিটেডে উচ্চপদে যোগ দেওয়া এবং সাংসারিক জীবনে থিতু হওয়া। কিছুদিন হায়দ্রাবাদে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অফ ইন্ডিয়ায় চাকরি। পারিবারিক কারণে আবার কলকাতায় ফিরে আবারও পুরনো কোম্পানিতেই যোগ দেন। স্ত্রী মীরা, কন্যা মধুমিতা ও পুত্র মৌলিনাথকে নিয়ে আনন্দময় সংসারজীবন। জীবনাবসান ৬ জুন ২০১০।
আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।