পথ ঢেকে যায় নক্‌শিকাঁথায়
লেখক – পৃষতী রায়চৌধুরী
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – শুভঙ্কর চক্রবর্তী
সম্পাদনা– সুমেরু মুখোপাধ্যায়
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
শিরোনামলিপি- পার্থ দাশগুপ্ত
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা –১৪৪
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৩০০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-93186-14-0

অনলাইন কিনতে –
বইচই ও থিংকারস লেন ডট কম































যেন ফেলে আসা এক রেশম পথের কথা। না, ইতিহাসের পাতায় নেই তার নাম। একখানি ছোট গাঁ, আর গাঁয়ে একচালা পাঠশালা এক। সেই পাঠশালে পড়ত সে। পাঠশালা যাবার রাস্তাটা ছিল রেশমপথ। পথের দু’ধারে বাস ছিল রূপকথার বস্ত্রকারদের। কে জানে কোন মায়ারাজ্যের কুঁচবরণ কন্যেদের জন্য বসন বুনত তাঁরা। পথ চলতে চলতে শোনা যেত তাঁত বোনার খটাখট শব্দ। বুনতে বুনতে সুতো কেটে গেলে সেই কেটে যাওয়া বাতিল সুতোর বান্ডিল ছুঁড়ে ফেলে দিত। মাটির দাওয়া পেরিয়ে রাস্তায় এসে পড়ে থাকত চুপ করে। প্রতিদিন ইস্কুল যাওয়ার পথে সংগ্রহ করত সে বাতিল সুতোর গুটলি। বিশুদ্ধ মুর্শিদাবাদ সিল্কের সুতো। কি যে পেলব, মসৃণ স্পর্শ! সেই গাঁয়ের গরিব তাঁতীদের বোনা গরদ আর সিল্কের শাড়ির যে জগৎজোড়া খ্যাতি তা জেনেছিল বড় হয়ে। একটা ছোট বাক্সে জমিয়ে রাখত কুড়নো রেশম-সুতোর গুটলি। কোথায় যে হারিয়ে গেছে সেই গুপ্তধনের বাক্‌সো কে জানে। বহরমপুরের গঙ্গার ধার দিয়ে, শিবপুরের জিটি রোড পেরিয়ে, কানপুর হয়ে একদিন পাড়ি দিল সেই মেয়েটি সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে।

আশির দশকে যাদের শৈশব কেটেছে, সেই প্রজন্মের ভাণ্ডারে না আছে তেমন কোনও যুগান্তকারী খণ্ডকালের দলিল-দস্তাবেজ, না আছে দাঙ্গা-মন্বন্তর-দেশভাগ-নকশাল আন্দোলনের প্রত্যক্ষ আঁচে অগ্নিশুদ্ধ কোনও অমূল্য অভিজ্ঞতার অভিজ্ঞান। তবে বিশ্বায়নের মুক্ত দরবারে মধ্যবিত্তের পাড়ি দেওয়ার শুরু এই প্রজন্মের হাত ধরেই। মাটিতে আসন পেতে বসা গ্রাম্য পাঠশালা থেকে যাত্রা করে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির ইউনিভার্সিটির অত্যাধুনিক গবেষণাগারে। কাঠের জ্বালে গুগলি রান্না আর লস এঞ্জেলেস পোর্টের সয়েল টেস্টিং— দুইই সামলেছে অনায়াস স্বাভাবিকতায়। ষষ্ঠী পুজোর হলুদ সুতো হাতে বেঁধেও মন দিয়েছে সল্ঝেনেৎসিনের উপন্যাসে। গোষ্পদ আর মহাসাগর— দুই আধারেই প্রত্যক্ষ করেছে মহাকাশের প্রতিচ্ছবি। একই রকম বিস্ময় আর মুগ্ধতা জেগে ছিল। হারিয়ে যাওয়া বাক্‌সো থেকে কে যেন সেই রঙবেরঙের রেশম সুতো বার করে বুনে চলেছে এক স্বপ্ন কাঁথা। সেই নক্‌শি কাঁথার যত ছবি সব যেন তাঁর জীবন থেকে নেওয়া।

পৃষতী রায়চৌধুরী

জন্ম ১৯৭৭ সালের ৩১ অক্টোবর, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরে। স্কুলজীবন মুর্শিদাবাদে। শিবপুর বি ই কলেজ (বর্তমান IIEST) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক। আইআইটি কানপুর থেকে এমটেক এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া, সান দিয়েগো থেকে পিএইচডি করেছেন। বর্তমানে আইআইটি কানপুরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপিকা। সাহিত্যচর্চার শুরু ২০০৪ সাল থেকে। লিখেছেন ‘দেশ’, ‘সানন্দা’, ‘বাংলালাইভ’, ‘ও কলকাতা’, ‘দূরের খেয়া’, ‘মঞ্জরী’ ইত্যাদি নানা পত্রপত্রিকায়। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্বৈত’ নামে একটি গল্প সঙ্কলন (সৃষ্টিসুখ প্রকাশন)। বেড়াতে ভালবাসেন, আবার ঠিক ততটাই ভালবাসেন ঘরের কোণে বসে পছন্দের উপন্যাসে ডুব দিতে।

ছবি- সমিত রায়চৌধুরী

আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।