ষাটের দশকের শেষ। দু’বছরের অন্তরালে দুই পড়শি দেশের সঙ্গে দুটো যুদ্ধ। খাদ্যদ্রব্যের দামে আগুন, চাকরির বাজারে মাছি ভনভন। ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’। সেই মলিন ক্ষয়া নষ্টচন্দ্রের সময়ে জ্বলে উঠেছিল একটি আগুনের ফুলকি, বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ। আমরা জানলাম– বন্দুকের নলই রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে আমাদের অনেকের হাতই পুড়ল। কিন্তু এ হল তুষের আগুন। সহজে নিভল না।
এই বইয়ের সময়কাল নব্বইয়ের দশক যখন সত্তরের রণক্লান্ত নকশালরা ছত্রভঙ্গ। এই রক্তাক্ত শিবের গাজনে এসেছে অবহেলিত নন্দীভৃঙ্গীরা, চাপা পড়েনি উমার অবসাদ। নারীর আপাত-অবহেলিত কন্ঠ ধরা দিয়েছে কয়েক টুকরো ডায়রির পাতায়। সূত্রধার এক কাল্পনিক কথোপকথন রচনা করেছেন বিপ্লবের সঙ্গে। রমণীয় দ্রোহকাল চেষ্টা করেছে শিবকে ছেড়ে উমাদের কথা বলতে; বাম-র্যাডিক্যাল আন্দোলনের ভিতরে পিতৃতন্ত্রের থাবার করাল রূপকে আঁকতে। বইটির আখ্যানভাগের শেষে রয়েছে নকশাল আন্দোলনের রূপরেখা, কালপঞ্জী এবং নেতৃস্থানীয়দের সংক্ষিপ্ত পরিচয় বর্তমান সময় পর্যন্ত।
নকশাল আন্দোলনের মধ্যে সুপ্ত পিতৃতন্ত্রের প্রতি প্রতিবাদ প্রথাগত নকশাল রূপকথার একরৈখিক আখ্যানমালার বাইরে নিয়ে গেছে এই বইকে এবং করে তুলেছে চিরকালীন।
রঞ্জন রায়
রঞ্জন রায়ের জন্ম দেশভাগের পরবর্তী দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতায়, মেডিক্যাল কলেজের জেনারেল ওয়ার্ডে মেঝেতে পাতা বিছানায়। মেয়েদের স্কুলে প্রাইমারি পড়া সমেত স্কুলের গণ্ডি টপকাতে লাগে তিন তিনটে স্কুল । অর্থনীতি ও আইন পড়তে লাগল পাঁচটি কলেজ– দুটো কলকাতায়, বাকি ছত্তিশগড়ে।
ছত্তিশগড় গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ বছর কর্মজীবনে ওই রাজ্যের আনাচেকানাচে আদিবাসী গাঁয়ে জঙ্গলে নদীর পাড়ে ঘোরাঘুরি। অবসরের পর ছত্তিশগড়ের একটি এনজিও’র বোর্ড সদস্য ও অন্যটির কনসালট্যান্ট। আস্তানা ছ’মাস দিল্লি ও ছ’মাস কলকাতা। বর্তমানে সময় কাটে আড্ডা দিয়ে ও লেখালেখি করে। বেশিরভাগ লেখা প্রকাশিত ওয়েব ও লিটল ম্যাগাজিনে। হিন্দি থেকে অনুবাদ করেছেন কুরু কুরু স্বাহা, রাগ দরবারী।
প্রকাশিত বই ‘বাঙাল সমাজের চালচিত্র’ ও ছোটদের জন্য ‘তেরোর গেরো’।