না-জনা ব্রহ্মাণ্ডের অজানাকে জানতে এবং গাঁজা-ভাঙ্ না খেয়েই যদি উড্ডীন হতে চাইলে আছে এই বইটি।
আড্ডা-এয়ার্কির মানুষ রঞ্জন ঘোষাল। তার দোহারকিও কিছু কম সংখ্যার নয়। সুতরাং, বিশ্বতানে যে ধ্রুবপদটি বাঁধা আছে সেটিকে খুঁজে জীবনগানে গুঁজে দেবার বদ্খেয়ালের নামই যে অজানা উড়ন্ত বই বা অ.উ.ব. সে কথা সিগারেটের ছাই না ঝেড়েও বলা যায়। জন্মেস্তক তাঁর এস্টকে কত যে অভিজ্ঞতার ইষ্টক, নুড়ি ও পাথর, তার আর লেখাজোকা নেই। মানে সংগ্রথিত নেই। সেই ভুল শোধরানোর জন্য আমরা রঞ্জনদা-কে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছি, ভুশণ্ডির কাকের পরমায়ু হোক আপনার, কিন্তু বাঁধা ছাঁদা এখনই শুরু করে দিন। বলুন, কোথায় কবে কী সব মুক্তো ছড়িয়েছেন। সে সব গাঁথা হোক। সে মুক্তোর মালা আমরাই না হয় গলায় পরে বোস্থাগ্বো।
আমরা এখন ওখান থেকে লেখাগুলো কুড়িয়ে বাড়িয়ে নিলাম। সেই সব রাই কুড়িয়েই বেল। সবটুকু যদি পড়ে ফেলেন তবে তাঁর অনেকখানি পরিচয় পেয়ে যাবেন। তবে কেবল তাঁর নিজেকে নিয়েই তো এই বই নয়, অপরিমিত রহস্যের ভাণ্ডার এই বই। তার কতটা আপনার চাকরির পরীক্ষায় লাগবে আর কতটা আপনার বানপ্রস্থের ডেস্টিনেশান নির্বাচনে, তা খোদায় মালুম। তবু, ডিসেম্বরে রেল ওয়াগনের ভিতরটা ঠাণ্ডা থাকে না গরম, অর্কেস্ট্রার সঙ্গে গুবগুবি বাজানো অবিধেয় কিনা বা কাকে বলে দুন্দুভি আর কোন্ নদীর নাম মাণ্ডবী, সে সবের হদিশ এই দুই মলাটের মধ্যে রেখে যাচ্ছেন। ওঁর ভাষায় “আমার পাণ্ডিত্যের বহর জানতে চেয়ো না, এই জন্মে ‘অতি অল্পই হইল’ ।”
ইদানীং হাতে যষ্টি রাখেন তাতে মধু না থাকারই সম্ভাবনা, পাঠক-সমালোচকেরা সাবধান।
চতুদ্দিকে বেনাবন। এবং রঞ্জন সেখানে অম্লানে ছড়িয়ে চলেছে প্রচুর মুক্তো। ঝুটো মুক্তো? না লখী বাবুকা অস্লি সোনা চাঁদির দুকানের গেরান্টি করা মাল?
না কিনলে, না গলায় পরলে জানবে কী করে ভায়েরা, মানাচ্ছে কিনা? যত সব বাঁদুরে প্রশ্ন।
তার ওপর বইটার দাম ছ’শো টাকা(শালারা মরবার আর জায়গা পায়নি!) ছ’শো? এই টাকায় দশটা চটি কবিতার বই কেনা যায়। যাবতীয় বন্ধুবান্ধবদের হাবড়-জাবড় লেখায় বেয়াকুল লিটল ম্যাগ কেনা যায় খান বিশেক। তিন পেলেট বিরিয়ানি হয়ে যায়। কী দোদুল্য পাঠক? রিস্ক নেবেন?
রঞ্জন ঘোষাল
তড়িৎ প্রকৌশলী, মহীনের ঘোড়াগুলির প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য, সাহিত্যিক ও নাট্যকার। রসনা ধারালো। রসবাসনায় প্রকৃতার্থে গুর্মে। গুণগান কোথা থেকে শুরু করা যায়? ১৭ বছর বয়সে কৃত্তিবাসে প্রথম কবিতা প্রকাশিত। ‘হার মানালে গো ভাঙিলে অভিমান, হায় হায় হায় হায়’ তাঁর স্কুল জীবনে সুর করা প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত। স্কুল থেকে ফিরে ঠাণ্ডা ভাত তরকারি খেতে বিমুখ হয়ে খুন্তি ধরার শুরু কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই খুন্তিটি ছাড়ার আর সময় পাননি। বরং বিয়ের পরে ব্যাঙালোরে রান্নার দায়িত্বে পাকাপাকি অভিষেক এবং এ যাবৎ সে অবস্থার কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি।
ব্যাঙালোরে ও বিদেশে ভারতীয় নাটক ইংরিজীতে অনুবাদ ও প্রযোজনা করে থাকেন নিয়মিত । ইংরিজীতে রাজ দর্শন, মারীচ সংবাদ, সাজানো বাগান, জগন্নাথ, বাকী ইতিহাস ছাড়াও কন্নড় নাটক হয়বদন ও ইংরাজি নাটক শোয়াইক ইন দ্য সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়র প্রযোজনা করেছেন।
এই বইয়ে পেয়ে যাবেন তাঁর আংশিক পরিচয় মাত্র। তিনি কী কী রঙে দাড়ি রাঙান, হ্যাটস্ট্যান্ডে তাঁর কতগুলো টুপি, কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন, নেচেছেন, আর কোথায় কোথায় পুলিশের হাতে থাপ্পড় খেয়েছেন- তার কিছুই আজনা হবে না।
সমালোচনা আলোচনাগুলি পড়তে ছবির উপর ক্লিক করুন।
অজানা উড়ন্ত বই নিয়ে পাঠকের দরবারে হাজির রঞ্জন
রঞ্জন ঘোষাল। বঙ্গের শিল্প ও শিল্পী মহলে যাঁর অবাধ যাতায়াত। গান থেকে সাহিত্য। সবেতেই তিনি স্বচ্ছন্দ। যৌবনে জড়িয়ে ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের ভগীরথ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মহীনের ঘোড়াগুলি-র সেই সব সোনালী দিনগুলো এখনও টাটকা রঞ্জনের স্মৃতিতে। ‘ক্যাপ্টেন’ না থাকলেও তাঁর কালজয়ী সৃষ্টিকে এখনও নিজেদের মত করেই বাঁচিয়ে রেখেছেন রঞ্জন ঘোষাল, আব্রাহাম মজুমদাররা। সোমবার সন্ধ্যায় আরও একবার তাঁদের সেই সব সোনালী ঝলকের সাক্ষী হল শহর কলকাতা। উপলক্ষ্য ছিল রঞ্জনের লেখা নতুন বইয়ের উদ্বোধন। যা এবারের আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে। শহরে জ্ঞানীগুণী মহলে রঞ্জনের গুণমুগ্ধের অভাব কোনও দিনই কম পড়েনি। তবে এই চেষ্টার মধ্য দিয়ে ফের চেনা রঞ্জনকেও নতুন ভাবে আবিষ্কার করবেন তাঁরা, উদ্বোধনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এরকমই দাবি করলেন রঞ্জন জায়া সঙ্গিতা। রঞ্জনের লেখা ‘অজানা উড়ন্ত বই’ নিয়ে চূড়ান্ত আশাবাদী তিনি। বলছিলেন বাংলায় এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়নি। বইটি জুড়ে রয়েছে একাধিক রম্যরচনামূলক প্রবন্ধ। গোটা বইতে তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন অবাস্তবকেও। আর সেটা একেবারেই তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। সেটাই লেখক রঞ্জনের ইউএসপি।
ভয়েস অফ রিপাবলিক ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ সম্পূর্ণ বিপোর্ট পড়তে ক্লিক করুন এইখানে।
বজ্রশলাকায় খোদিত মৃৎফলকে লিখিত অজানা ঐশীর উড়ন্ত বই
‘অনুস্মৃতি’র প্রারম্ভেই ছাত্রজীবনের দুষ্টুমিমাখা পলায়ন। একবার মল্লারপুরস্টেশনে বিনা টিকিটে ধরা পড়ে স্টেশনমাস্টারের ছেলেকে পড়ানোর দায়িত্বলাভ। আর একবার গঙ্গাসাগর মেলা থেকে ট্রাকে ফেরার সময় চোরাই কচ্ছপদের সঙ্গে ট্রাকের পাটাতনে নিশিযাপন। সেই শুরু। পরবর্তীকালে সাধুর ভেক ধরে চষেছেন গুলবর্গা, মনমাড, শিরডি প্রভৃতি স্থানে। পুলিশের মার খেয়েছেন, দীনহীন সাধুর কাছে খিচুড়িও খেয়েছেন। সেই সাধুবাবার নিজের ধারণা তাঁর বয়স দুহাজার বছর। এক গামছা বিক্রেতা কুড়ি টাকার গামছা আট টাকায় বেচলে কত টাকার পুণ্য হবে জানতে চাইলে তিনি সেই বিক্রেতাকে অম্লানবদনে বারো টাকার পুণ্যের স্বত্ত্বাধিকার দান করেছেন। পথে দান হিসেবে পেয়েছেন ক্ষীরিকে, এক ছাগল, ভাল নাম পয়স্বিনী। দেখা মাত্রই ক্ষীরি তাঁকে অ্যাডপ্ট করে নিয়েছে। জৈন আশ্রমে গিয়ে জেনেছেন ক্ষীরি নেই, সে মনহরিণী, লেখকের একাকিত্ব কাটাতেই সে আসবে বারবার। তবে জীবনের মহামন্ত্র পেয়েছেন সূফীসাধক বরকত খানের কাছে। তিনি বলেছেন, “ঈশ্বর নেই, আছে শুধু তাঁর প্রেমটুকু।”
মাঝে একবার কলকাতা ফেরা। সেই ফাঁকে পরিচয় দিয়েছেন বিস্ময়প্রতিভা দীপক মজুমদারের, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র প্রাণভোমরা। ”মহীনের ঘোড়াগুলি’র অশ্রুত হ্রেষা’ অধ্যায়ে তার বিশদ বিবরণ আছে। এক বিপন্ন সময়ে কতকগুলি উজ্জ্বল তরুণের কি ভয়ংকর পাগলামি। ঐ প্রখর মৌলিকত্ব সহ্য করার ক্ষমতা তখন বাংলাগানের শ্রোতাদের অধিকাংশের ছিল না। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ তাই উপযুক্ত স্বাগত-অভ্যর্থনা পায়নি। তবে সবার অলক্ষ্যে বাংলাগানের রেনেসাঁ ঘটিয়ে তারা কিছুকালের জন্য গা-ঢাকা দিল। লেখকের অনবদ্য ইনস্ট্যানশিয়েশন, ‘এট্টুখানি ডাঁড়ান, স্যার’ বলে তারা ত্রিশ বছর বেপাত্তা। ইতিমধ্যে শ্রোতারা নতুন প্রজন্মের গানে পাগলের মতো খুঁজছে মহীনের ঘোড়াদের। ঐ ঘরানার সঙ্গীতে উপচে পড়ছে অডিটোরিয়ামগুলো।
চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম ওয়েবজিনে সমালোচনায় নয়ন কোনার, সেপ্টেম্বর সংখ্যা ২০১৮ সম্পূর্ণ পড়তে ক্লিক করুন এইখানে।