আত্মহত্যার সম্পূর্ণ বিবরণী
লেখক – প্রজ্ঞাদীপা হালদার
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – বাবলি পাল
সম্পাদনা – সুমেরু মুখোপাধ্যায়
শিরোনামলিপি- পার্থ দাশগুপ্ত
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা –১৬৮
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৩০০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-35-0

অনলাইন কিনতে – বইচই বা থিংকারস লেন
































অনন্তের পথে অক্ষরেরা কিরকিরে একরকম নৈঃশব্দ্য। স্তিমিত অভিলাষে চলাচল। সিলভিয়া প্লাথ লিখেছিলেন, আমার উপন্যাসে আমিই থাকব, তবে ছদ্মবেশে। তাঁর সব লেখাই তেমন উত্তমপুরুষেই। ক্ষেত্রবিশেষে তা উত্তমকন্যা হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ যা কিছু পুরুষ নয় তার কোনও সম্ভাবনা নেই এই পৃথিবীতে।  যা কিছু পুরুষ নয়, তা আত্মহত্যাস্পৃহাময়। লেখা তাই কিছুতেই মেয়েলি হয়ে ওঠে না। অথবা ওঠে, কে জানে। সবকিছু নিয়েই দ্বিধাদ্বন্দ্বে এই পর্যটন। লেখা কী কেবলই ভাষা? আসলে যে জীবন বিলীয়মান, উহ্য হচ্ছে মফস্‌সল, তার নেহাত লড়ঝড়ে বাঙালিয়ানা নিয়ে, এই এক অসহ্য অবিচুয়ারি। হয়তো এমন অকিঞ্চিকর শোকগাথা সকলেরই আছে। 

এক জন্মের উত্তরাধিকার, উদ্বাস্ত জীবন খুঁজে নেয় মফস্‌সল। ডাহুকের ছানারা সেখানে অবিকল কালো উলের গোলার মতো। কলপাড়ে ভাত খুঁটে খেত যারা তাদের দেখা নেই বহুকাল। অন্য কোথাও আর একটু নিভৃত কলপাড়, ছায়াঢাকা দুপুরমণিফুলের ঝোপ খুঁজে নেয় হলুদ প্রজাপতি। চড়াই নিরুদ্দেশ কত শতাব্দী হয়ে গেল। লিখতে হবে তবে, এইখানে চড়াই নামে এক পাখি ছিল? সকলেই চড়াই হয় একদিন। মফস্‌সল বেঁচে থাকে খোঁড়াখুড়িতে। অতীত? রোজ হারিয়ে যাওয়া চোদ্দোটা ভাষা আর দুশো ছাপ্পান্নটা প্রজাতির সঙ্গে শব্দ বোনা হয়। কাদের আলি ফকিরের ধানখেতের পাখিরা উড়ে গেছে অন্যতর কুয়াশায়। সব হারানো এ লেখায় তাই কোনও নদী নেই। থাকবারও কথা নয়। তবু এ লেখার শুরুতে উরাল নদীর কথা মনে পড়ে। তাঁর বাবার রাশিয়ান বই জমাবার বাতিক ঠেলে সে অবশ্য সমাজতান্ত্রিক কিছুতেই তেমন বিশ্বাস রাখেনি। অথবা ছিল। নয়তো বা কেন গুডবাই লেনিনের অ্যালেক্সের মতো এই ভীমরতি, এই বই।

ইট পাথর ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের জঞ্জালের পাহাড়ে বসে সে লিখে যায় এন্তার মফস্‌সলের বিয়োগান্তের ইতিকথা। শীত সরে গেলে একটু একটু করে পাগলেরা ফিরে আসে, প্রগাঢ় ধুলো জমে ক্যাসেটের দোকানে। লিখে রাখা বিষাদে জাল বোনে নিজেদের আত্মহননপ্রক্রিয়া। এ তল্লাটে স্মৃতি মুছে ফেলার কোনও মেশিন পাওয়া যায় না আপাতত।

প্রজ্ঞাদীপা হালদার

গালিবের যেমন দিল্লি, মান্টোর যেমন বোম্বাই, এঁর তেমনই বারাসাত। জন্ম উনিশশো ছিয়াশিতে। এই মফস্‌সলের প্রেমে পড়ে যাওয়া হয়নি আর কোথাও। একনিষ্ঠ ভালবেসেছেন গলির মোড়ের টাইমকলকে, জ্যোৎস্না মিউজিক হাউজকে, বন্দোপাধ্যায়দের আমবাগানকে আর কলপাড়ে খাম্বায় বসে ঝিমোনো বাবার সাদা বেড়ালনীকে। যেদিন এই মফস্‌সল শহরে বদলে যাবে ইনি খুঁজে নেবেন অনাঘ্রাত নতুন কোনও মফস্‌সল।

কিছুই করার নেই বলে একটা চাকরি করেন।  ভালবাসেন হাঁটতে। স্বপ্ন দেখেন একদিন হাঁটতে হাঁটতে শিওক নদীর উপত্যকায় চলে যাবেন। কাঁধে এসে বসবে দীর্ঘপুচ্ছ নীল ম্যাগপাই।

সমস্ত প্রবাসের পাশে
ঘুমিয়েছে সাদা হাঁস ,
আমরা ও নিদ্রা গেছি দূরত্বের পাশে

দীর্ঘ সব বিষাদের ভিড়ে
জেগে তবু আমাদের বাড়ি,
হাওয়ার খিলান আর মেঘের মিনারে

স্পেনীয় জাহাজে বয় বৃদ্ধ সুবাতাস,
বাণিজ্য তরণী ভেড়ে
অলিতে গলিতে।

মেঘেদের চিঠি লিখে ক্লান্ত সারাদিন
মার্গারিটা সমস্ত প্রবাস।

আমাদেরও নেশা ঘটে
এই সব সামান্য স্মৃতির

আমাদেরও বিষাদ-গাথা
স্তব্ধ হয়ে আসে।

সমালোচনা বা আলোচনাগুলি পড়তে ছবি বা লিংকে ক্লিক করুন।

দৈনিক ওংকার বাংলা, ২০ ডিসেম্বর ২০২০