কবিতা লিখতে ভয় করে
শ্রেণীহীন সমাজের কথা বলেছিল যে অরণ্য তা উজাড় করে ক্রমাগত এগিয়ে আসছে শহর। দেশের শ্রেষ্ঠ মেধা নিয়ে বিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যেসব ছাত্র, ক্রমাগত বিশীর্ণ পাতার মতো তারা ভেসে গেছে কলস্বনা মহানন্দায়; সে নদীও এখন কালোজলের আবিল নর্দমা। বাতাসে আর ওড়ে না তিতাসের জারিগানের সুর “বাছা তুমি রণে যাইও না। চৌদিকে কাফিরের দেশ, জহর মিলে তো পানি মিলে না”।
উৎসবের মরসুমে সেলের বিজ্ঞাপনের মতো দিগ্বিদিক আন্ধার করে আসে ব্লগার খুন, শিশু-ধর্ষণ, রোহিঙ্গা শিশুর মৃতদেহ, বধূহত্যা। সেল, সেল, চৈত্রসেল। বাতাসে বারুদগন্ধ। সর্বত্র পচনের, পাপের আঁশটে গন্ধ এসে নাকে লাগে। কোমরবন্ধে আঁটা বাঘমুখো তরোয়াল দৃঢ়মুঠি করে ধরেন টিপু সুলতান, আরও একবার কী তবে জিতে নেওয়া যাবে না এক অনাবিল, সুস্থ পৃথিবী?
তাই মহানন্দার তীরে অবিনশ্বর ছাতিমের মতো এই বই, পুড়ে যাওয়া দেশকালের উপর ছড়িয়ে যাচ্ছে নতুন বীজ, লিলুয়া বাতাসে। বলে যাচ্ছে নবধারাপাতে নবাঙ্কুরসম রূপকথা। ফিনিক্সের উড়ানের মতো এই প্রোজ্জ্বল নকশা রচনা করেছেন বিপুল দাস, কেননা তার কবিতা লিখতে ভয় করে।
লেখক
বিপুল দাসের জন্ম শিলিগুড়িতে। বিজ্ঞানে স্নাতক। পেশা ছিল শিক্ষকতা, বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। শিলিগুড়িতেই বড় হয়ে ওঠা, লেখাপড়া, চাকরি। নদী, পাহাড়, ডুয়ার্সের অরণ্যঘেরা এই শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জনজাতির বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি চিরকাল মুগ্ধ করেছে। এখান থেকেই মূলত লেখার উপাদান সংগৃহীত। উপন্যাস, ছোটগল্প ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে রম্যরচনা, শিশুকিশোরদের জন্য লেখা। রয়েছে একটি কবিতা সংকলন। প্রথম সাড়াজাগানো গল্প ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ প্রকাশিত হয় অধুনালুপ্ত ‘পাহাড়তলি’ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস ‘লালবল’ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুধী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর লেখা লিটল্ ম্যাগাজিন এবং বাণিজ্যিক পত্রিকায় সমান ভাবে আদৃত।
আজও তাঁর ভাল লাগে উত্তরবাংলার আলপথে, তিস্তার পাড় ধরে হেঁটে যেতে যেতে লোকসঙ্গীত শুনতে। ভাল লাগে ডুয়ার্সের অরণ্য।