কামলাসুন্দরী – কর্মরতা মেয়েদের নিজের কথা
লেখক – অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়, অদিতি বসু রায়, অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অনুজা চট্টোপাধ্যায়, অনুষ্টুপ শেঠ, অরিজিতা মুখোপাধ্যায়, আইভি চট্টোপাধ্যায়, ঈপ্সিতা সেনগুপ্ত, কানঙ্কুমারী বিশ্বাস, টিনা মিত্র সরকার, দময়ন্তী দাশগুপ্ত, দেবারতী মিত্র, ধৃতিদীপা চৌধুরী, পার্বতী বাউল, পিয়ালী চক্রবর্তী, পিয়ালী দাস, মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনীয়া, মৈত্রেয়ী সরকার, মৌপিয়া মুখোপাধ্যায়, যশোধরা রায়চৌধুরী, রিনি বিশ্বাস, রেবা রক্ষিত, শতাব্দী দাশ, শ্রীজাতা, শুভশ্রী পাল, সঙ্গীতা ঘোষ দস্তিদার, সায়ন্তি ঘোষ, সায়ন্ন্যা দাশদত্ত, সাঁঝবাতি রায়, সীমা বল, সুমনা বিশ্বাস, সুমনা সান্যাল, সোনালী সেনগুপ্ত, সোমাইয়া আখতার ও সৈয়দ তারাৎ বেগম
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – গৌরভী শর্মা, মারিয়া বেরিয়ো, লঁরা কালাঘান, পার্বতী বাউল ও পার্থ দাশগুপ্ত
সম্পাদনা – জয়িতা বাগচী, সুমেরু মুখোপাধ্যায়
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা – ৪০০
রয়াল সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৭৫০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-81-934397-5-3

অনলাইন কিনতে –
অ্যামাজন ইন্ডিয়া
বইচই































সে তো কবে থেকেই পুরাণ আর আর লোককথায় দেবীদের একাধিক হাত। তাই বাস্তব সংসারে উড়ে এসে জুড়ে বসে মাতৃবন্দনা, মানে কি না মেয়ে মানেই দেবী মানে এই দশভুজাটুজা গোত্র, যাকে টপ করে আজকালকার ফ্রেমওয়ার্কে ফেলে বলে দেওয়া যাবে মাল্টিটাস্কিং।

কিন্তু সুখের সে দিন সুখের বলেই অধরা হয় মনে হয়। মেয়েরা আজকাল আর ললিত লবঙ্গলতা নয় বলে দশটা পাঁচটার চাকরি ঠেলে ঘরে ফেরে। সকাল থেকে কাজের যাঁতায় পিষ্ট হওয়া, একই চাকরি করতে যাওয়া বরের মুখে খাবার ধরে হোঁচট খেতে খেতে বাসে চড়ে অফিস, সেখানে সহকর্মী কিম্বা উর্দ্ধতনের টিটকিরি কিম্বা লোভের দৃষ্টি উপেক্ষা করতে করতে কাজ, কাজের ফাঁকে বাচ্চার হোমওয়ার্ক আর বাড়িতে আটা ফুরিয়ে গেছে কি না ভাবতে ভাবতে মাঝে মধ্যেই আয়নায় টুক করে দেখে নিতে হয় যে আদৌ দশটা হাত, যা গজালে সুবিধে হয়, তার কোনও পূর্বাভাস আছে কি না। নেই বলেই ছেলেমেয়ের ভাল মা, স্বামীর ভাল বউ, শ্বশুরগৃহে ভাল বউমা হয়ে ওঠা হয় না।

এই সেই মেয়েদের কথা, যাঁরা প্রকৃতপ্রস্তাবে দশভূজা। এই নকশা বুনেছেন মেয়েরা, যারা কি না কর্মরতা, কামলা খেটে যান সেইসব সুন্দরীরা, একালের বাউলনী, সেকালের ট্র্যাপিজবালিকা, ডাক্তার, সিস্টার, মাস্টার, সফো, বনবিশেষজ্ঞ আরও কত কী, মহাশির মাছের সুচারু সন্তরণে মেয়েরা যাপন করছেন রোজ, আর বলে যাচ্ছেন

এত যদি ব্যূহ চক্র তীর তীরন্দাজ, তবে কেন
শরীর দিয়েছ শুধু, বর্মখানি ভুলে গেছ দিতে !

সে এককালে সোনার দিন ছিল, মেয়েরা যখন অন্দরমহলের নজরমিনারে বন্দী, সারাদিন সংসারের ঊনকোটি চৌষট্টি চলে, চলতেই থাকে, তাঁরা গয়নাবড়ি দেন, নারকেল কুটে শিলে একটি একটি করে চিঁড়ে বানান, বছর বছর বাচ্চা বিয়োন, নকশিকাঁথা ফুল্ললতা সিলিয়ে যাও পাখি বল তারে এঁকে থোন সংসারের পাটে পাটে। মাতৃত্ব ও সংসার একমাত্তর মোক্ষ তা কে না জানে।

অবশ্য সিলভার লাইন ছাড়া মেঘ কী হয়? তাই কর্মরতা তাঁর কাজের নিবিষ্টিতে বুঝে নেন ভালবাসা, কাজের জন্য, জীবনের জন্য এবং স্বাধীনতার জন্য। আমাদের দেশের উপজাতীয় সমাজের অনেক জায়গায় মেয়েদের কথা দিতে হয় তাঁরা সংসারের পুরুষটিকে খেটেপিটে খাওয়াবেন। বুড়োশালিখের সমাজ অবশ্য সে কথা বলিয়ে নেয় না এমন প্রকাশ্যে, তবে তারও মূলসুর সেই এক, আর কে না জানে সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। তাই এই বই নিজেকে দেখার আয়না। এই চেষ্টা নিজেদের গণ্ডী অতিক্রমের, ভাষা অর্জনের আশ্বাস আর স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেওয়া আগামী প্রজন্মকে।

আলোচনা সমালোচনা পড়ার জন্য ছবিগুলিতে ক্লিক করুন।

আজকাল ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮