খেয়া পারের খেয়ালি বন
লেখক –সীমা গঙ্গোপাধ্যায়
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – প্রণবেশ মাইতি
সম্পাদনা – সুমেরু মুখোপাধ্যায়
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা – ২২৪
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৩৫০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-07-7

অনলাইন কিনতে –
বইচই বা থিংকারস লেন ডট কম































এই বই কোনও কথা বলে না, মৌনই এখানে সঙ্গীত। চুপিচুপি লিখে যাওয়া আত্মমগ্ন নদীর কথা, নির্লিপ্ত গাছের কথা, সাপের সঙ্গে লড়াই, দ্বিধা আর সংস্কারকে তাড়া করা মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায় ক্ষীণ। শীতল জল ছোঁয়ার মতো হাওয়া দেয় রোদ্দুর, টর্চ লাইটের ছুরি কেটে দেয় অন্ধকার, সীমান্ত জুড়ে ভারী বুট আর রেডিও খুলনার সতর্কবার্তার করাল মেঘ দাঁতে কাটে আয়লা নামের রাক্ষস। দিশেহারা ছিন্নভিন্ন মানুষেরা তবু নতুন ঘর তোলে। ব্রতী হয় নতুন জীবনের সন্ধানে। স্বভাব অলস সীমা মনে মনে শুধু ছবি আঁকতেন টাকীতে থাকতে। বিয়ের পর কলকাতার শহরবাসে কথা বলতেন নিজের সঙ্গে। একটা ফোন পাল্টে দিল তার জীবনের মানে। ২০১৪ সালে তাঁদের একমাত্র সন্তান দীঘির পথ দুর্ঘটনায় থেমে গেলে পাল্টে যায় সব। পাল্টে গেলেন সীমাও। এখন দূরদূরান্তে দীন পর্ণকুটিরে ঘুরে ঘুরে সন্ধান করেন অলীক সরষে দানার, যে সংসারে কষ্ট নেই, দুঃখের ছায়া নেই, যারা মৃত্যুঞ্জয়ী।

এখন মন আলো করা মানুষের কথা উঠে আসে তার লেখায়। লেখার সঙ্গে সঙ্গে এগোয় সমাজকর্ম। কাজের ক্ষেত্র চির অবহেলিত সুন্দরবন। মঊলে, গুণিন, বাঘ, ডাকাত, চোরা শিকার, দেবদেবী আর তুকতাকের গাছে ঘেরা আলো না ঢোকা কাদায় মোড়া এক বনাঞ্চল। গল্পে পড়া সুন্দরবন নতুন ভাবে ধরা দিল তার কাছে। দীঘির গাঙ্গুলী ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবায় অক্লান্ত তিনি। সীমান্তবর্তী দ্বীপগুলিতে চোখ বাঁচানোর কাজ চলছে নিয়ত। আর তার সঙ্গে চলছে অবলাদের না বলা অনেক অনেক গল্প সারা বই জুড়ে। মানুষের গল্প। এই গোটা বইতে কোনও প্রভু নেই, সরকার নেই, রাষ্ট্রর খবরদারী নেই। এ এক অদ্ভুত নির্মাণ। অনন্ত খেয়া পারাপারের মাঝে খামখেয়ালি বন কেবল অনিশ্চিত এক আশ্রয়।

সীমা গঙ্গোপাধ্যায়

সীমার জন্ম টাকীতে। লেখাপড়া জমিদার অধ্যুষিত বনেদি টাকীর গার্লস স্কুলে। তার পর টাকী গভর্নমেন্ট কলেজের পাঠ চুকিয়ে কলকাতা ইউনিভার্সিটির বাংলায় এম এ। স্বভাব অলস সীমাকে চাকুরি কখনও টানেনি। বিবাহসূত্রে পাকাপাকিভাবে চলে আসা কলকাতার উপকণ্ঠে। সময়ে আসে সন্তান দীঘির। আবার ব্যস্ততা, উদ্বেগে থাকে সময়।

দু’হাজার চোদ্দোর দশ এপ্রিল দীঘিরের চিরিকালীন থেমে যাওয়ার খবর আসে। থেমে থাকেন না সীমা। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। তিলে তিলে গড়ে ওঠে শোকগাথা―দীঘির কথা, জন্মদাত্রীর দিনলিপি। লেখার সঙ্গে যোগ হয় কর্মকাণ্ড। জনসেবার লক্ষ্যে গড়ে তোলেন ‘দীঘির গাঙ্গুলী ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট’। নিয়োজিত আছেন সুন্দরবনের মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবায়। পাশাপাশি টাকীতে টাকীতে তৈরি করছেন চক্ষু হাসপাতাল। সুন্দরবন এখন তাঁর দ্বিতীয় ঘর। খেয়া পারের খেয়ালি বন সীমার তৃতীয় বই।

লেখালিখির জন্য পেয়েছেন শেলটার পুরস্কার ২০১৯

আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।

শিলাদিত্য জুন সংখ্যা, ২০১৯
একদিন পত্রিকা ১৩ জুলাই ২০১৯
দৈনিক সুখবর ২৪ জুন ২০১৯