গদ্যসংগ্রহ – প্রথম খণ্ড
লেখক — রণজিৎ সিংহ
প্রচ্ছদ — এ এফ এম মনিরুজ্জমান শিপু
অলংকরণ- খালেদ চৌধুরী, যুধাজিৎ সেনগুপ্ত, হিরণ মিত্র
সম্পাদনা – শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
ফোটোগ্রাফ- রণজিৎ সিংহ
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা – ৪০০
রয়াল সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৬০০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-08-4

অনলাইন কিনতে –
বইচই ও থিংকারস লেন ডট কম










গদ্যসংগ্রহ – দ্বিতীয় খণ্ড
লেখক — রণজিৎ সিংহ
প্রচ্ছদ — এ এফ এম মনিরুজ্জমান শিপু
অলংকরণ- খালেদ চৌধুরী, যুধাজিৎ সেনগুপ্ত, হিরণ মিত্র
সম্পাদনা – শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়
ফোটোগ্রাফ- রণজিৎ সিংহ
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা – ৩৪৮
রয়াল সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৬০০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-09-1

অনলাইন কিনতে –
বইচই ও থিংকারস লেন ডট কম































প্রথম খণ্ড

শিকড়ের সন্ধানে লোকগানের হাত ধরে জীবনে জীবন যোগ করার কথা অব্যর্থ ভাবে মানতেন রণজিৎ সিংহ। তাই শৌখিন লোক-বিশেষজ্ঞের আলখাল্লা পরে না থেকে বেরিয়ে পড়েছেন মাটির টানে। সেই যাত্রারই ফসল তাঁর লেখালিখি। মানুষের শুধু গানটুকুই নয় , যাপিত জীবন ও গান-জীবন দুই-ই অন্বিষ্ট ছিল তাঁর। তাই জীবন খুঁজে বেরিয়েছেন বিহার-ছত্তিশগড়-উত্তরবঙ্গ-আসাম-বাংলাদেশে। লোকগানের সমৃদ্ধ উত্তরাধিকারের অংশীদার হতে সম্বল ছিল  নিজের বিশ্বাস আর অনুসন্ধিৎসু মন। এমনকী আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে, এই শহর কলকাতার যেসব জায়গায় নাগরিক মানুষের স্বচ্ছন্দ যাতায়াত, সেসব জায়গা থেকেও তুলে এনে চমকে দিয়েছেন লোকসংস্কৃতির অতুলনীয় সব সম্পদ। এ শুধু সংগ্রহ-সংরক্ষণ নয় , বরং সমষ্টির জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া।প্রতিটিক্ষেত্রেই রণজিৎ অবধারিত ইনসাইডার । চর্চিত প্রয়াস নয়, এ তাঁর স্বভাবের গুণ। তাই রণেন রায়চৌধুরীক, তিজন বাই, মুন্ডারি গ্রামের নাম না-জানা লোকশিল্পী, সুরমা নদীপাড়ের মানুষজন, বস্তারের লোকশিল্পীরা গ্রথিত হন একই সুবর্ণসূত্রে।

ভারতের লোকগান আর লোকসংগীত লেখকের আগ্রহের কেন্দ্র হলেও মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক দাবিগুলিও অস্বীকৃত হয়নি। তাই বস্তারের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ভাবে উঠে এসেছে অরণ্যে কার অধিকার সেই প্রসঙ্গ, উঠেছে লোকসংগীতের সঙ্গে সরকার ও মিডিয়ার পৃষ্ঠপোষণার সম্পর্কও।

রণজিতের সফরনামা সংস্কৃতির মানচিত্রে এক সাম্য-সাধনার সংবেদী আলেখ্য। হেজিমনির কাউন্টার স্টেটমেন্ট। সংস্কৃতির নাটমন্দিরে প্রান্তিকের পদচারণ।  

দ্বিতীয় খণ্ড

লোকসংগীত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সঙ্গে সঙ্গেই রণজিৎ সিংহের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল পরিবর্তমান সমসময়। গ্রামে , মফস্‌সলের জনপদে কিংবা মহানগরে তাঁর নিবিড় দৃষ্টি মানুষের ওপরেই নিবদ্ধ। তাঁর অনুসন্ধান যে সবসময় রীতরেওয়াজ মানা ক্ষেত্রসমীক্ষা তা নয়। চেনা রাস্তার বাঁকেও তাঁর জন্য অপেক্ষা করে থাকে বিস্ময়। বহুকালের

চেনা পথঘাট উদ্ভাসিত হয় নতুন প্রেক্ষিতে। বিলীয়মান স্পর্শ-গন্ধের নবজাগরণ হয়। জীবন মানে তাঁর কাছে কেবল মানবসন্তানের একার জীবন নয়। তাঁর সমান আগ্রহ ছিল কলকাতার গাছপালা-পুকুর নালা-পাখিদের নিয়েও। ভোরের কলকাতায় তিনি শুধু ভিক্টোরিয়া-গড়ের মাঠ-পার্ক স্ট্রিটের রূপমুগ্ধতার মৌতাতে মেতে থাকেন না। শহরকলকাতার প্রাণকেন্দ্রে যেখানে শ্রমজীবী মানুষের লড়াই শুরু হয় ভোর থাকতেই কিংবা ফুটপাতবাসী মায়ের শিশু সন্তানটি, যাকে তার মা হয়তো বসিয়ে রেখেছেন কোনো গাছের তলায়, সবাই সমান মনোযোগ আকর্ষণ করে। বাঙালির প্রাণপ্রবাহে কলকাতার মধ্যে থাকা সেই আরেক কলকাতার যে সমান অংশীদারি তা নতুন করে ফুটে

ওঠে রণজিতের কলমে।

          বিচিত্রবিদ্যায় আগ্রহী রণজিৎ কলকাতার রাস্তায় অবতীর্ণ হয়েছেন ফটোতুলিয়ে হিসেবেও। অন্তর্গত প্রেরণা , নিশ্চিত সেই ইতিহাস সংরক্ষণ। আবার কখনো খেয়ালি রণজিৎ আপনমনে শুনিয়েছেন নিজের নিত্যনতুন শখের কথাও। পাঠক যখন সামান্য আড়ালে বসে শোনেন সেসব শৌখিনতার বৃত্তান্ত,  রণজিৎ যেন কোন জাদুতে তাঁকেও শরিক করে নেন সেই শখের যাত্রায়।

রণজিৎ সিংহ (১৯৩৭-২০০১)

লোকসংগীত গবেষক, কবি ও অনুবাদক। তাঁর লেখালেখির যাত্রা আমাদের

সংস্কৃতির মূল অভিমুখে। পরম্পরার টানে রণজিৎ শহর থেকে বারবার গ্রামে চলে যেতেন, শরীরে-মনে সেই গ্রামকে আত্মস্থ করে তাকে বয়ে আনতেন আমাদের কাঠখোট্টা শহরে। মাটির সুরের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তমান সমসময়ে শহরের নিয়ত রূপান্তর, বিচিত্র কারুকলা, বৃত্তি, মানবিক আদানপ্রদান, এ সবও তাঁর লেখার বিষয়।

রণজিতের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন রাজপুত। কিন্তু বাংলায় থিতু হন তাঁর পূর্বতন দুই পুরুষ। বাড়ির ভাষা ছিল ভোজপুরি এবং বাংলা। তবে তাঁর পরিবার দেশভাগের বলি। তাঁর বাড়ির লোকেরা নিশ্চিত ছিলেন, নদীয়া জেলা গোটাটা ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত হবে। তা হয়নি। তাঁর জন্মভূমি আলমডাঙা পাকিস্তান হল। রেলের চাকুরে হিশেবে বাবা ‘ভারত’ বন্ড দিয়েছিলেন। তাঁর ‘ভারত’ অংশে বদলি হল। একান্নবর্তী পরিবার টুকরো টুকরো হল। এক অংশ বিহারে গেলেন , এক অংশ আলমডাঙায় থাকলেন। রণজিতেরা আলমডাঙা ছাড়লেন। ছিন্নমূলের-প্রায় জীবনে রণজিৎ মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর, বেলডাঙা হয়ে শেষমেশ অনেক ভাঙচুরের পর কলকাতায় এসে থিতু হন। কিন্তু আলমডাঙা তাঁর মনের মধ্যে বাস করেছে সারা জীবন। গ্রামবাংলার সুর বেজেছে হৃদয়ে প্রায় সমগ্র জীবনভর। ১৯৫৭–য় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ। ১৯৬০-৬১-তে সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। লেখালিখি শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। কবিতা, গল্প, রিপোর্টাজ। ‘স্বাধীনতা’, ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘কবিতা’, ‘পরিচয়’, ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখেছেন। ১৯৬৬-তে প্রথম কবিতার বই ‘স্থান কাল পাত্র’। পরে প্রকাশিত হয়েছে আরও অনেকগুলি কবিতার বই। অনুবাদ করেছেন রাহুল সাংকৃত্যায়নের ‘ভবঘুরে শাস্ত্র’। গদ্যের বই চারটি : ‘মাটির সুরের খোঁজে’, ‘বস্তার অরণ্যের সুর’, ‘দখিনা হাওয়া’  আর ‘কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়’।

আলোচনাগুলি পড়তে নির্দিষ্ট স্থানে ক্লিক করুন।

এক অমলিন জীবনের সানন্দযাপন

একটা সময় আর সেই সময়ের সংলগ্ন বিশিষ্ট এক মন বিছিয়ে আছে সংগ্রহটিতে। বিহারের ছাপরা জেলার কক্‌র্‌হট গ্রাম থেকে নদিয়ার আলমডাঙা— এই পরিক্রমার ইতিবৃত্ত যে-মানুষের অতীত, তিনি দেশভাগের পর মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, বেলডাঙা হয়ে অনেক ভাঙচুরের ভিতর দিয়ে কলকাতায় পৌঁছলেন। কুড়ি বছর বয়সে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ পেলেন, তিন-চার বছরেই বুঝলেন, সক্রিয় রাজনীতি তাঁর জন্য নয়। ইতিমধ্যেই হাতের কাজের দৌলতে বন্ধুমহলে তাঁর নাম ‘পোস্টারমাস্টার’। লোকসঙ্গীত সংগ্রহে, ‘ফোকমিউজিক অ্যান্ড ফোকলোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট’কে সমৃদ্ধ করে তোলার তাগিদে রণজিতের পরবর্তী যাত্রা। সে যাত্রাপথের বিন্যাস মেলে মাটির সুরের খোঁজে আর বস্তার অরণ্যের সুর (১৯৯৫) বই দু’টিতে। মাটির গন্ধমাখা নিখাদ লোকসঙ্গীত খুঁজতে গেলে যে বিকৃত, আধুনিকতার তালেগোলে দুষ্ট মিথ্যে সুর আর অসত্য গায়নকে প্রত্যাখ্যান করার জোর চাই, সেই সত্যি ছড়িয়ে আছে ছত্রে ছত্রে। অনন্তবালা বৈষ্ণবী থেকে তিজন বাঈ, রণেন রায়চৌধুরীর সুনামগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গের কুনোর গ্রামে বাংলাদেশ-দিনাজপুরের হরেন্দ্রনাথ রায়ের গলায় ভাওয়াইয়া আর চটকা শোনা। রণজিৎ জানাতে ভোলেন না, প্রচলিত খঞ্জনি কেনার পয়সা নেই বলে সাইকেলের এক জোড়া বাতিল করা বেলের বাটি দিয়ে হরেন বানিয়েছেন তাঁর গানের সঙ্গত। এ খঞ্জনিতে ধ্বনির অনুরণন দীর্ঘতর। আবার উত্তরশিবপুরে গরিব চাষি ধর্ম রায়ের গান শোনার বর্ণনায় এসে পড়ে উত্তরবঙ্গের দোতারায় মুগার সুতো আর পূর্ববঙ্গের দোতারায় তারের ব্যবহারের প্রসঙ্গ। সুনামগঞ্জের দোকানদার বিদায়ের মুহূর্তে বলে ওঠেন ‘‘আজ না হয় আমরা ভিন্ন হয়েছি, কিন্তু আমরা তো এক মায়ের সন্তান।’’

আনন্দবাজার পত্রিকায় দীর্ঘ সমালোচনা করেছেন রুশতী সেন, ২৭ জুলাই ২০১৯

সম্পূর্ণ পড়তে ক্লিক করুন এইখানে

বই প্রকাশের আগে আজকালের প্রিভিউ