গোল্লাছুট
লেখক – কাশীনাথ ভট্টাচার্য
প্রচ্ছদ– পার্থ দাশগুপ্ত
গ্রাফিক্স- শঙ্কর সরকার
ফোটোগ্রাফ- রনি রায়, সন্দীপ দত্ত, কাশীনাথ ভট্টাচার্য
সম্পাদনা – প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
অতিরিক্ত সংযোজন- বানান নিয়ে, তথ্যঋণ
পৃষ্ঠা – ৪৬৪
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৬০০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-81-934397-3-9



অনলাইন কিনতে –
অ্যামাজন ইন্ডিয়া
বইচই































এ প্লাস বি হোল স্কোয়ার, মানে এ স্কোয়ার প্লাস টু এবি প্লাস বি স্কোয়ার। বিশ্বের যে কোনও স্কুলে সেভেন-এইট পড়েছে যে, জানে। বিশ্বজনীন। জাপান-জার্মানি-জাম্বিয়া, এমনকি জলপাইগুড়িতেও, এক। কিন্তু, কোনও দিন স্কুলের দরজা পেরয়নি যে? সে-ও জানে, কাকে বলে তিনকাঠি। পেছনে থাকে মায়াজাল। পায়ের বলটাকে জড়িয়ে দিলে সেখানে, ঘটে ইন্দ্রজাল। বল চামড়ার হোক, কাপড়ের, সিন্থেটিক, কিংবা কুটিকুটি কাগজ জড়িয়ে কুটির শিল্প অথবা নেহাত বাতাবি লেবু, কী আসে যায়! খোলা-ঘেরা মাঠ, উঁচু-নিচু সমতল-অসমতল এবড়োখেবড়ো সব জমিতেই এক নিয়ম। এতটাই ইউনিভার্সাল যে ‘এ প্লাস বি হোল স্কোয়ার’ও পাত্তা পায় না।

পায়ের সামনে গোলাকার কিছু পেলে বাচ্চা পা ছোড়ে। এতটাই স্বাভাবিক, সহজাত। আলাদা বলতে হয় না। শট। দিক্‌বিদিক হারিয়ে গড়িয়ে যায় আনন্দ। পায়ে পায়ে আনন্দ। এর ভাল নাম ফুটবল! সেই আনন্দই তাড়িয়ে বেড়ায় কোন খ্যাপা। আলফ্রেদো দিস্তেফানো, ফেরেঙ্ক পুসকাস, পেলে, ইউসেবিও, জোহান ক্রুয়েফ, দিয়েগো মারাদোনা, রোমারিও, রোনালদো, জিনেদিন জিদান, লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোরা বই আলো করে যেমন আছেন, পাশাপাশিই আছেন হারবার্ট চ্যাপম্যান, ভিত্তোরিও পোজো, বেলা গুতমান থেকে আজকের পেপ গারদিওলা। ফুটবল কৌশলের বিশদ বিবরণ, সময় সারণি বেয়ে। হরেক লড়াই এর রূপকথা আর বুদ্ধির মার-প্যাঁচের অচেনা হাতের তালু আর পায়ের যাদু এবার এক মলাটে। এই বই খেলতে শেখায়, দেখতে শেখায়, পড়তে শেখায়। আনন্দের মাঝে বিষাদ আসে, জীবনের মতো। ক্ষমতার দম্ভ থাকে, অক্ষমতারও। রাজনীতির কুটিল-করাল ছায়া ‘ঘনাইছে’ মাঠে মাঠে। তবু, প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও আরও দাও ‘পাস’।‘গোল্লাছুট’ আসলে একটা পাস। বাড়িয়ে দেওয়া, বেখেয়াল। ‘রাখাল’ রোনালদিনিওর মতো। ধরলে, গোলমুখ খুলে যাওয়ার আনন্দ!

কাশীনাথ ভট্টাচার্য

নিজেকে ফুটবলের তীর্থযাত্রী ভাবেন কাশীনাথ ভট্টাচার্য।

ডায়নামো মস্কো ক্লাবে লেভ ইয়াসিনের মূর্তির পেছনে শিল্পীর ভাবনায় গোলপোস্ট ত্রিভুজাকৃতি। একা একাই দেখতে গিয়ে মুগ্ধ দর্শক। সানতোসে পেলে মিউজিয়াম চার-তলা। এক-একটি তলায় পেলের খেলা এক-একটি বিশ্বকাপের গল্প। পড়তে-পড়তে নেমে-আসা মাটিতে। মারাকানোজো দেখা সম্ভব ছিল না, মিনেইরাওজো দেখেছিলেন প্রেস বক্সে বসেই। ১-৭, ব্রাজিলের দুঃস্বপ্নের সাক্ষী বেলো ওরিজোন্তে-তে।

ফুটবল নিয়ে পড়াশোনা, দেখা এবং লেখাই প্যাশন। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-যুবভারতী, কাঞ্চনজঙ্ঘা-কোচি হয়ে লুঝনিকি-মারাকানা, ফুটবল-সফর চলছে। বাঙালি একমাত্র সাংবাদিক হিসাবে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ‘কভার’ করেছেন ‘অ্যাক্রিডিটেড জার্নালিস্ট’ হয়ে, মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে, যেখানে হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালও। ‘কভার’ করেছেন ২০১৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ, ব্রাজিলে, ফলত ফুটবলের তীর্থদর্শন।

‘গোল্লাছুট’ দ্বিতীয় বই তাঁর। ‘বিশ্বকাপ ফুটবল’-এর পর এবার পাঠকদের সামিল করেছেন ফুটবলেরই আনন্দযজ্ঞে।

আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবি বা নির্দিষ্ট লিংকে ক্লিক করুন।

বাংলা লাইভে সমালোচনায় মিঠুন ভৌমিক। বই প্রকাশের দুই বছর পরে প্রকাশিত এই সমালোচনা জানান দেয় সময়কে জয় করতে বইটি অনেকটাই এগিয়ে গেছে।

গোল্লাছুটের বিরল পাঠসুখ

যাঁরা গবেষণাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাঁরা জানেন, যেকোন কাজ শুরু করার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রশ্নটা হল, সেই বিশেষ কাজটি কেন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানের চালু লবজে বলতে গেলে, এর উত্তরে দুরকম কথা বলা হয়।এক, এই কাজটা করা হচ্ছে কারণ এটা করা যায়। দুই, কাজটা করা হচ্ছে কারণ এটা করা খুব দরকারি ছিল।
কিছুদিন যাবৎ ফুটবল নিয়ে লেখালেখি শুরু করার সময় থেকেই এই বিষয়ে বইপত্রের খোঁজ রাখতে শুরু করেছিলাম। ৯ঋকালের বই ‘গোল্লাছুট’ এর কথা জানা মাত্রই  আগ্রহ তৈরি হয়। বইটি সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানার পরে আগ্রহ আরও বাড়ে, এবং একসময় হাতেও আসে। এই বইয়ের প্রোজেক্টের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করব আমরা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি উত্তর- কাজটা করা হচ্ছে কারণ এটা করা খুব দরকারি ছিল।
ইংরেজি ভাষায় বহু ভাল বই আছে ফুটবল নিয়ে। খুব ভাল গবেষণাভিত্তিক বই যেখানে ফুটবল ট্যাকটিক্স নিয়ে আলোচনা করা আছে, তারও অভাব নেই। উদাহরণ স্বরূপ, ডেভিড গোল্টব্লাটের ‘দ্য বল ইজ রাউন্ড’, বা জোনাথন উইলসনের ‘ইনভার্টিং দ্য পিরামিড’ এর নাম বলাযায়। কাশীনাথবাবুও এই দুটি বইয়ের সাহায্য নিয়েছেন সময়বিশেষে। ভারতীয় ফুটবলের কথায় নোভা কাপাডিয়ার লেখালেখির কথা বলা যায়। কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বোরিয়া মজুমদারের গবেষণাপত্রের কথাও বলা যায়, যেখানে ফুটবলেতিহাসের উপর সমাজের ছায়া চমৎকার আলোচিত হয়েছে। মুশকিল হল, উপরোক্ত বইগুলোর একটিও বাংলায় নয়। কাজেই, এ শুধু শখের প্রোজেক্ট  নয়, রীতিমত দরকারি প্রতিবেদন। বাংলায় লেখালেখি একেবারে হয়নি তা নয়। ২০১৮ বিশ্বকাপের আগেই এই ধরনের দুয়েকটি বই নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ হয়েছে এবং প্রতিক্রিয়া এক কথায় বলতে গেলে হতাশাজনক।

দেশভাগের পরে জনৈকা নবীনকিশোরী দেবী আসছেন ফরিদপুর থেকে। তাঁকে সীমান্তে রক্ষীরা আটকেছে। বহু বিতণ্ডার পর স্যুটকেস খুলে রক্ষীরা দেখল গোষ্ঠ পালের ছবি। পুলিশ অফিসার ক্ষমা চেয়ে টিকিট করে কলকাতা পাঠিয়ে দিলেন। প্রাচীরসম ডিফেন্ডারের মা ছেলেকে জিগ্যেস করেন, কী এমন কাজ করে ছেলে যে পুলিশও খাতির করে। ফরিদপুরের বাঙাল নাকি স্টেশন কাঁপিয়ে হেসে বলেছিলেন, ‘কিসসু না গো মা, শুধু বলে লাত্থাই!’

এবার বইয়ের কথায় আসা যাক। হার্ডকভারে শক্তপোক্ত বাঁধানো। সবুজ মলাটের বই। প্রচ্ছদে ষড়ভূজাকৃতি খোপ কাটা। একটি লালরঙের বল গোলে ঢুকছে। জাল কাঁপিয়ে সবেমাত্র যেন একটা গোল হয়ে গেল। ছবিটি আমাদের একরকম ভাবায়। বইটি উল্টে ব্যাককভার দেখে নিশ্চিৎ হওয়া যায়, হ্যাঁ গোলই বটে। মলাটের ভেতরে শুরুতে বইটি নিয়ে দুকথা। আর শেষে লেখক নিয়ে কয়েক লাইন। লেখক পরিচিতি অনেক ভালভাবে লেখা হয়েছে, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশ সংক্ষিপ্ত।

বাংলা সংবাদপত্রে যাঁরা খেলার খবর পড়েন কাশীনাথ ভট্টাচার্যের নাম তাঁদের কাছে অপরিচিত নয়। কিন্তু যাঁরা খেলার খবর পড়েন না বা কালেভদ্রে পড়েন তাঁদের কাছে লেখক বা পুস্তক পরিচিতি দুইই আগ্রহ জাগানোর জন্য যথাযথ এমন কথা বলা  যায় না। ‘গোল্লাছুট’ আসলে যে এক অভিজ্ঞ ফুটবলপাগল সাংবাদিকের পৃথিবী চষে ফেলার গল্প, সেই কথাটাই কোথাও ভাল করে লেখা নেই। কোনও ভূমিকা নেই। যেখানে এই বইয়ের কথা, কীভাবে হয়ে উঠল এই বই— সেইসব কথা লেখা থাকবে।
এই বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে ছড়িয়ে আছে বিশ্ব ফুটবলের অসাধারণ সব ম্যাচের ইতিহাস, ট্যাকটিকাল আলোচনা, খেলোয়াড়দের জীবন, কোচেদের জেতা হারার খতিয়ান — এই কথাটি ভাল করে জেনে গেলে এই বই সম্পর্কে আগ্রহ না জন্মে উপায় নেই। বিশেষ করে বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা এতে খুবই উৎসাহিত হবেন। কারণ এমন যত্নে লেখা খেলার মাঠ থেকে করা সরাসরি প্রতিবেদন বিরল।

পুরনো বাংলা খবরের কাগজে একসময় ফুটবল নিয়ে  খুব ভালো মানের আলোচনা প্রকাশিত হত। বছর তিরিশেক আগেও নিয়মিত বেরোত ‘খেলা’, যা ক্রীড়াসাংবাদিকতায় সর্বভারতীয় যেকোনও খেলার কাগজকে টেক্কা দিতে পারত। সাংবাদিকতার সেই সুবর্ণ যুগ এখন অতীত। শুধু তার কিছু মণিমুক্তো কাশীনাথবাবুর লেখার মধ্যে পাওয়া গেল। পুরনো রিপোর্ট ঘেঁটে, সম্ভবত সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করেও অনেক অজানা তথ্য তুলে এনেছেন তিনি। এখানে আছে কোচ পি কে ব্যানার্জির ছাত্রদের সম্পর্কে মূল্যায়ন এবং সুধীর কর্মকারের সময়জ্ঞান নিয়ে পি কে-এর বলা কথা।

আছে অজস্র জানা অজানা মাঠের বাইরের গল্প, যা পড়ে অলৌকিক মনে হয়। দেশভাগের পরে জনৈকা নবীনকিশোরী দেবী আসছেন ফরিদপুর থেকে। তাঁকে সীমান্তে রক্ষীরা আটকেছে। বহু বিতণ্ডার পর স্যুটকেস খুলে রক্ষীরা দেখল গোষ্ঠ পালের ছবি। পুলিশ অফিসার ক্ষমা চেয়ে টিকিট করে কলকাতা পাঠিয়ে দিলেন। প্রাচীরসম ডিফেন্ডারের মা ছেলেকে জিগ্যেস করেন, কী এমন কাজ করে ছেলে যে পুলিশও খাতির করে। ফরিদপুরের বাঙাল নাকি স্টেশন কাঁপিয়ে হেসে বলেছিলেন, ‘কিসসু না গো মা, শুধু বলে লাত্থাই!’

মোহনবাগান-মহমেডান-ইস্টবেঙ্গলের কথা তো আছেই। এছাড়াও রাজস্থান, কুমোরটুলির মত অধুনালুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় কিছু ফুটবল ক্লাবের কথা আছে। একসময় এইসব ক্লাব থেকে উঠে আসতেন তারকারা। তাঁদের কেউ কেউ তথাকথিত বড় ক্লাবে না খেলেই দেশের হয়ে খেলেছেন, তারকা হয়েছেন।

এবারে প্রকাশনার মান নিয়ে বলি। একেবারে শুরুর দিন থেকেই ৯ঋকাল প্রকাশনার মান খুব উঁচু তারে বেঁধে ফেলেছে। চমৎকার কাগজে, অপূর্ব নান্দনিকতায় ভরা অলঙ্করণে তাদের প্রতিটি বই স্রেফ বহিরঙ্গের উৎকর্ষেই সংগ্রহযোগ্য হয়েছে। ‘গোল্লাছুট’ও তার ব্যতিক্রম নয়। বিদেশের বিভিন্ন বইয়ের দোকানে আমাদের যেমন বই হাতে নিয়ে মনে হয়েছে খুব যত্নের কাজ, সেরকম গোল্লাছুট হাতে নিয়েও মন ভালো হয়ে যায়।

এবারে বিষয়বস্তুতে আসা যাক। ভারতীয় ফুটবলের সূচনাকাল যাঁদের নিয়ে আগ্রহ আছে তাঁরা খুবই আনন্দ পাবেন এদেশে ফুটবলের গোড়ার কথা পড়ে। মোহনবাগান-মহমেডান-ইস্টবেঙ্গলের কথা তো আছেই। এছাড়াও রাজস্থান, কুমোরটুলির মত অধুনালুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় কিছু ফুটবল ক্লাবের কথা আছে। একসময় এইসব ক্লাব থেকে উঠে আসতেন তারকারা। তাঁদের কেউ কেউ তথাকথিত বড় ক্লাবে না খেলেই দেশের হয়ে খেলেছেন, তারকা হয়েছেন। এছাড়াও ক্লাব ও দেশের হয়ে খেলা পরিচালন সংস্থাগুলোর রাজনীতি নিয়ে কিছু লেখা আছে।

বিশ্বফুটবলের কথা আছে এখানে। বিশ্বকাপ লাইভ কভার করেছেন কাশীনাথবাবু। কাজেই তাঁর প্রতিবেদনে খেলার খুঁটিনাটির সঙ্গে মাঠের পরিবেশও দিব্যি ধরা পড়ে। বিশ্ব ফুটবলের পরিবর্তনের বাঁকগুলোর বেশ কয়েকটির তিনি সাক্ষী। অনেকগুলো পেশাগত কারণেই তাঁকে ভাল করে জানতে হয়েছে। তাঁর আগ্রহ আন্তরিক, তাই বইটি সাধারণের জন্য সংগ্রহযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বইয়ের শেষে দুটি সংযোজন বইটিকে অন্য মাত্রা দেয়। প্রথমত, লেখক বিদেশি ক্লাব-ফুটবলার-কোচেদের নামের উচ্চারণ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। এই প্রয়াস অন্যত্র দেখিনি। একথা অনস্বীকার্য যে বর্তমানে বিদেশি নাম নিয়ে খামখেয়ালিপনার চূড়ান্ত হয়। কোনওরকম কারণ ছাড়াই দিনের পর দিন ভুল উচ্চারণে নাম ছাপা হয় বাংলায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক বা সাংবাদিক কোনরকম ব্যাখা দেবার প্রয়োজনবোধ করেন না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে নামের উচ্চারণ নিয়ে আলোচনা খুবই সময়োপযোগী এবং সাধুবাদযোগ্য কাজ। দ্বিতীয় যে মূল্যবান সংযোজন ঘটেছে তা হল তথ্যঋণ। বাংলা ইংরেজি বইপত্র এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা দেওয়া আছে এখানে, যার থেকে আগ্রহী পাঠক রসদ সংগ্রহ করতে পারবেন।

একই বইয়ের মধ্যে ঠাসা রয়েছে ফুটবলের ইতিহাস, স্ট্র্যাটেজির পরিবর্তন, জনপ্রিয় তারকাদের নিয়ে প্রচলিত সত্যি ঘটনা ও মিথ, এবং ভারতীয় ফুটবল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। লেখকের কাছে অনুরোধ এই বিষয়টি যেন পরবর্তি সংস্করণের সময় মাথায় রাখা হয়। মনে রাখতে হবে, ‘গোল্লাছুট’ নিছক স্মৃতিকথা নয়। তার চেয়ে বেশি কিছু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে এই বইয়ের।

শেষে ফিরে যাওয়া যাক শুরুর প্রশ্নে— কাদের জন্য লেখা হল এই বই?
উত্তর যদি হয় ফুটবলানুরাগীদের জন্য, বা আরও একটু বিস্তারিত করে ক্রীড়ানুরাগীদের জন্য, তাহলে বলতে হবে লেখক প্রকাশকের আরএকটু দূরের কথা ভাবা উচিত ছিলো। এই বইকে লেখক অনায়াসে করে তুলতে পারতেন ফুটবল গবেষকের অবশ্যপাঠ্য টেক্সট। এই মুহূর্তে যে আকারে বইটা সাজানো ও পরিকল্পিত, তাতে ফুটবল নিয়ে সিরিয়াস কাজ করতে চাওয়া গবেষকের খুবই অসুবিধে হবে। কারণগুলো একে একে লেখা যাক।

১) এত বড় বইতে (৪৫৮ পৃষ্ঠা, পরিশিষ্ট বাদ দিয়ে) কোন সূচীপত্র নেই। পঞ্চাশটি অধ্যায় আছে এরকম বইতে সূচীপত্রের না থাকা অবাক করেছে। এই সূচীপত্রের না থাকা আসলে অন্য একটা সমস্যার কথাও মনে করিয়ে দেয় যা বইটি পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে। সেটি হল, বিষয়বস্তু কালানুক্রমী নয়। এক সময় থেকে অন্য সময়ে মসৃণভাবে যাতায়াত করা হয়েছে। পড়তে ভালও লেগেছে। কিন্তু এটা খেয়াল রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে যে এই বিষয়ে অন্য কোথাও কী আলোচনা হয়েছিল।

২) সূচীপত্রের অভাবের মতোই চমকপ্রদ ইন্ডেক্স বা নির্ঘণ্ট না থাকা। যে বইতে লেখক অমন যত্ন করে উচ্চারণবিধির কথা লিখলেন, তথ্যঋণ স্বীকার করলেন, সেখানে কোনও নির্ঘণ্ট নেই কেন? একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে কেন সেটা অবশ্যকর্তব্য ছিল। ধরুন আপনি এই পাঠপ্রতিক্রিয়া পড়ে বইটি সংগ্রহ করেই ভাবলেন গোষ্ঠ পালের গল্পটা পড়বেন। বা পিকে ব্যানার্জি ছাত্র সম্পর্কে ঠিক কী বলেছিলেন দেখবেন। আলোচনার প্রয়োজনে কোনও ফুটবলপ্রেমী ভাবলেন ইন্টার মিলানের ১৯৬৩ -এর পারফরম্যান্স নিয়ে পড়বেন। বা হয়তো কারুর ডি-স্টেফানো সম্পর্কে আগ্রহ রয়েছে। এই সব যাবতীয় প্রয়োজনে পাঠকের হতাশভাবে বইয়ের সমস্ত অধ্যায় স্ক্যান করে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। অর্থাৎ, তথ্যটি, গল্পটি, বা ইতিহাসটা বইতে থাকলেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

৩) কাশীনাথবাবুর ফুটবল ম্যাচ কভার করার অভিজ্ঞতা প্রচুর। তাই দেশ বিদেশের ফুটবল নিয়ে অনেক কিছুই তাঁর লেখার আছে।  সেই সব কথা দুই মলাটের মধ্যে আনার সময় আরেকটু পরিকল্পনা দরকার ছিল। খুব ভাল হত যদি বইটি দু’ খণ্ডে বেরোত। একই বইয়ের মধ্যে ঠাসা রয়েছে ফুটবলের ইতিহাস, স্ট্র্যাটেজির পরিবর্তন, জনপ্রিয় তারকাদের নিয়ে প্রচলিত সত্যি ঘটনা ও মিথ, এবং ভারতীয় ফুটবল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। লেখকের কাছে অনুরোধ এই বিষয়টি যেন পরবর্তি সংস্করণের সময় মাথায় রাখা হয়। মনে রাখতে হবে, ‘গোল্লাছুট’ নিছক স্মৃতিকথা নয়। তার চেয়ে বেশি কিছু হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে এই বইয়ের।

৪) কিছু কিছু অংশ খুবই প্রক্ষিপ্ত লেগেছে। যেমন- ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ, বা ভারতে আয়োজিত অনূর্দ্ধ ১৭ বিশ্বকাপের খবর। রোজকার খেলার খবর হিসেবে বইটি লেখা হয়নি বলা বাহুল্য, বইয়ের বাকি অংশের সঙ্গে এই লেখাগুলির তেমন কোনও সামাঞ্জস্য তাই থাকেনি।

পরিশেষে, ৯ঋকাল বুকস এবং লেখক কাশীনাথ ভট্টাচার্যকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফুটবলের ওপর বাংলা ভাষায় এত সুলিখিত এবং তথ্যনির্ভর একটি বইয়ের পরিকল্পনার জন্য। আগামী দিনে খেলার প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণের পেশায় যাঁরা আসতে চলেছেন বা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন, তাঁদের অতি অবশ্যই সংগ্রহ করে পড়ে দেখার প্রয়োজন ‘গোল্লাছুট’।