প্রথম খণ্ড
বাংলার বনে বনে নিভৃতে ঘুরেছেন তিনি গত চল্লিশ বছর। আলাপ হয়েছে বনচারী সুজনের সঙ্গে, সারা গায়ে সেফটিপিনে পসরা আঁটা ডালাভাউরি থেকে চোরা শিকারিদের বন্ধু টাইগার আঙ্কেল, জঙ্গলমহলে চির বঞ্চনার প্রতীক লক্ষ করেছেন মোরগ লড়াইয়ে হাউসিদের রাগে। প্রকৃতির উদাস কাব্যের লাঞ্চিতা নাম না জানা নদী ও তাকে ছুঁয়ে ফেলা নীল পাহাড়ের আকাঙ্খার বুক চিরে লেখা হাতি খেদিয়ে রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পাওয়া ভীম মাহাতোর করুণ কাহিনি। মনে জেগে চিরবঞ্চিতদের কথা, অনাহার, অপুষ্টির রাজ্যে শিকার উৎসব, বনকর্মী স্বামীর সঙ্গে বনবাসে আসা সীতাদের কথা, নোটবুকে জেগে থেকেছে জঙ্গলে নির্বাসিত কুষ্ঠ রোগীদের কলোনি। এই বইয়ে লুকানো জঙ্গলের কিছু অজানা হাটের গুঞ্জন, পুত্কা মাছির মধু সংগ্রহের কথা, ভুটানি মেয়েদের কমলালেবুর মদ বিক্রির কৃৎকৌশল, পাহাড়ি ঝোরার রংবাহারি মাছ, সুগন্ধী চালের সুবাস নিয়ে হাজির অজস্র বনবাংলোর গল্প।
এই যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। বর্ণনাও বর্ণময়। একই অঞ্চলে ফিরে গিয়েছেন বারংবার, চিনেছেন নিত্য নতুন করে। কোথাও পুড়ে গিয়েছে অনুপম বনবাংলো রাজনীতির জিঘাংসায়। কোনও বনবাংলো ভেসে গিয়েছে নদীর আক্রোশে। ধরা রইল এমন অসংখ্য পরিচিত, অপরিচিত অধুনা লুপ্ত বন আবাসের পাশাপাশি তাঁরই সুপারিশে চালু হওয়া নতুন বনবাংলোর কথা। এই বই সাজানো হয়েছে দু’টি খণ্ডে। অরণ্য থেকে প্রাপ্ত বিষ্ময়কর সামগ্রীর কথা আছে ‘অরণ্যসংহিতা’য়। অরণ্যাচারী ব্যতিক্রমী মানুষদের কথা এসেছে ‘অন্য অরণ্যদেব’-এ। বনের আপামর রহস্য ধরা দিয়েছে ‘বিজন বাংলার বন দর্শন’-এ। জঙ্গলের বিচিত্র খাদ্যাখাদ্যের হাজিরা ‘জংলি পদাবলি’-তে। বাদ পড়েনি অখাদ্যে মৃত্যু ডেকে আনা আমলাশোল-এর করুণ কাহিনি বা কেবল অন্য মানুষের বাড়িতে পাত পাড়া ‘ভাতুয়া’-দের কথা। প্রথম খণ্ডে সংযোজিত হয়েছে কোথায় কবে হাট বসে তার হদিশ। বন আবাসের সম্পূর্ণ যোগাযোগ এবং বনবাংলোর মানচিত্র, যা শুধু এই বই পড়তে সাহায্য করবে না, আলো ফেলবে গহীন জঙ্গলের পথ চলায়, অরণ্যকে নিবিড়ভাবে ভালবাসতে।
দ্বিতীয় খণ্ড
বাংলার বনে বনে নিভৃতে ঘুরেছেন তিনি গত চল্লিশ বছর। আলাপ হয়েছে বনচারী সুজনের সঙ্গে, সারা গায়ে সেফটিপিনে পসরা আঁটা ডালাভাউরি থেকে চোরা শিকারিদের বন্ধু টাইগার আঙ্কেল, জঙ্গলমহলে চির বঞ্চনার প্রতীক লক্ষ করেছেন মোরগ লড়াইয়ে হাউসিদের রাগে। প্রকৃতির উদাস কাব্যের লাঞ্চিতা নাম না জানা নদী ও তাকে ছুঁয়ে ফেলা নীল পাহাড়ের আকাঙ্খার বুক চিরে লেখা হাতি খেদিয়ে রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পাওয়া ভীম মাহাতোর করুণ কাহিনি। মনে জেগে চিরবঞ্চিতদের কথা, অনাহার, অপুষ্ঠির রাজ্যে শিকার উৎসব, বনকর্মী স্বামীর সঙ্গে বনবাসে আসা সীতাদের কথা, নোটবুকে জেগে থেকেছে জঙ্গলে নির্বাসিত কুষ্ঠ রোগীদের কলোনি। এই বইয়ে লুকানো জঙ্গলের কিছু অজানা হাটের গুঞ্জন, পুত্কা মাছির মধু সংগ্রহের কথা, ভুটানি মেয়েদের কমলালেবুর মদ বিক্রির কৃৎকৌশল, পাহাড়ি ঝোরার রংবাহারি মাছ, সুগন্ধী চালের সুবাস নিয়ে হাজির অজস্র বনবাংলোর গল্প। এই যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। বর্ণনাও বর্ণময়। একই অঞ্চলে ফিরে গিয়েছেন বারংবার, চিনেছেন নিত্য নতুন করে। কোথাও পুড়ে গিয়েছে অনুপম বনবাংলো রাজনীতির জিঘাংসায়। কোনও বনবাংলো ভেসে গিয়েছে নদীর আক্রোশে। ধরা রইল এমন অসংখ্য পরিচিত, অপরিচিত অধুনা লুপ্ত বন আবাসের পাশাপাশি তাঁরই সুপারিশে চালু হওয়া নতুন বনবাংলোর কথা। এই বই সাজানো হয়েছে দু’টি খণ্ডে। ‘অরণ্যের প্রাচীন প্রমাদ’-এ আছে ঝলমলে উৎসবের মাঝে ঝান্ডিখেলা আদিবাসী মানুষের নিঃস্ব হওয়ার আঁধারঘন উপাখ্যান। অরণ্যের বিচিত্র প্রেমকথা সংকলিত হয়েছে ‘বিজন বনে সুজন সন্ধানে’। বিস্তীর্ণ বনাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা শিল্প অভীপ্সা এসেছে ‘জংলি গীতাঞ্জলি’-তে। চলচ্চিত্রকেও চ্যালেঞ্জ জানায় ‘জঙ্গল অপেরা’-র এক একটি কাহিনি। হরেক মিথ, স্বপ্ন, অবহেলার আগাছায় ঢেকে যাওয়া আশ্চর্য সব আস্তানার কথা ধরা রইল ‘বনবাসে বনবাংলো’-তে। দ্বিতীয় খণ্ডে সংযোজিত হয়েছে ‘অরণ্যকোষ’, যা শুধু এই বই পড়তে সাহায্য করবে না, আলো ফেলবে গহীন জঙ্গলের পথ চলায়, অরণ্যকে নিবিড়ভাবে ভালবাসতে।
জগন্নাথ ঘোষ

ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা। স্কুল জীবন দিল্লিতে। থাকতেন পাহাড়-জঙ্গলের কোল ঘেঁষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবাসে। জংলি নির্জনতা তাঁকে শিখিয়েছিল প্রকৃতির সহজপাঠ। কলেজের পাঠ বাংলার মফস্সলে। সেখানেও অঢেল প্রকৃতি— পথের পাশে ভাটফুলের ঝোপে ভ্রমরের গুঞ্জন, হাঁসচরা খিড়কি পুকুর, নিরালা বামুন পাড়া, আমের বোলের গন্ধে শিহরিত কায়েত পাড়া।
স্নাতোকোত্তর শেষ করে সওদাগরি অফিসে চাকরির সুবাদে শুরু পায়ে চাকা বাঁধা। চষে ফেললেন বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম-জঙ্গল-পাহাড়। কখনও ডুয়ার্সের গভীর অরণ্যে, গারো-রাভা-মেচিয়াদের সঙ্গে। দক্ষিণে সাঁওতাল-বিড়হর-ওঁরাওদের থেকে শিখেছেন অরণ্যের নানান সুলুক। সে শিক্ষা এখনও বলবৎ। জেনেছেন ভ্রমণ মানে অর্জন। তাই ভ্রমণসুরায় নেশাগ্রস্থ হয়ে কখনও ছোটা দক্ষিণে লাপাং, তিলাইটাঁড়, ত্রিবন্ধ কিংবা উত্তরে ইষ্টিকুটুম খামারবাড়ি, ভূজেলের উডহাউস, ভাওয়ালের লগহাউস—নিত্যনতুন বন আবাসের গন্তব্যে। এইভাবেই ঘুরতে ঘুরতে চেনা হয় জনপদ, জানা হয় আরণ্যক হকিকত, মুগ্ধ হন প্রকৃতির ঋতুলীলায়। এইভাবেই চল্লিশ বছর, ধরা রইল দুই খণ্ডে।
সমালোচনা বা আলোচনাগুলি পড়তে লিংক বা ছবির উপর ক্লিক করুন।
এ বঙ্গদেশের বনে-জঙ্গলে জগন্নাথ ঘোষ ঘুরছেন দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে। জঙ্গল-বন্যপ্রাণ-চা বাগান-অজানা হাট-মানবজমিন— কোনও কিছুই নজর এড়ায় না চিরপথিক এই মানুষটির। তাঁর দীর্ঘ যাত্রাপথের কিছু ঝলক ধরা পড়েছে সদ্য প্রকাশিত দু’টি খণ্ডে (বনবাসে বন আবাসে ১ ও ২, ৯ঋকাল বুকস, প্রতি খণ্ড ৫০০.০০)। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের নানা প্রান্তে, বর্ধমান-বীরভূমের রাঢ় মাটিতে নানা ঋতু ও কালে, প্রান্তিক মানুষজনের সঙ্গে সহজিয়া আলাপে নিছক ভ্রমণবৃত্তান্ত নয়, যেন কবিতার পঙ্ক্তির নির্মাণ হয়েছে জগন্নাথের এই দু’টি গ্রন্থের পাতায় পাতায়। দু’টি খণ্ডেই হিরণ মিত্রের অসাধারণ অলঙ্করণ গ্রন্থটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। নিরন্তর এক জীবন-পরিক্রমার কথাই যেন লেখেন জগন্নাথ, ‘এই আমিটার সন্ধানে হাতড়ে বেড়াই সবখানে।’
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সরাসরি পড়িতে ক্লিক করুন এইখানে।
