জীবন তো কল্পনা বা খেলনা না, সে তো সত্যি, তার বাবাই আছে, মায়ের গান আছে, টেলিফোন ভবনে অফিস আছে, আর ছোট্ট মেয়েটা উঁকিঝুঁকি দিয়ে বেড়ায়, নিজের মনে সাজায় রুশদেশের নানা উপাখ্যান, তার আছে হরেক দাদু-দিদা, হরেক নামের পিসি-মাসি, সুতরাং কোলের অভাব হয় না যেমন তেমন গল্পও জমা হয় অগুন্তি। এক সময় এসে পড়ে ভাই আর অমনি বড় হয়ে যায় সে। আমাদের রিনু কেবল বড় হয়। এইভাবে হটাৎ সে একা হয় একবার আর ভালবাসা খুঁজে বেড়ায় বিষণ্ণতার পৃথিবীতে। কান্না পেলে আশ্রয় ছোটবেলায় শোনা তার মায়ের গলায় রবিঠাকুরের গান আর আর ভেসে ওঠে বাবাইয়ের বইয়ের পাহাড়। সুতরাং স্কুল, কলেজ আর যা যা আমাদের করতেই হয় সেসব সে করে ফেলে এক নিমিষে। শুধু প্রেম করতে গিয়েই যা ভেবলে যায় সে।
এবার বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো আর একটু রাজনীতি। এর পর পা রাখে রিনু পেশার জগতে। এদিকে গত কয়েক দশকেই আমুল পরিবর্তন হয়ে গেল ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার। বিশ্বজগৎ আক্ষরিক অর্থেই চলে এল হাতের মুঠোয়। এদিকে তার চোখের সামনে নানা দুর্ঘটনার খবর। প্রতি নিয়ত আপডেট। ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট, বড়বাজারের আগুন, বেনজির ভুট্টোর হত্যা, ২৬/১১ মুম্বাই, মৃত্যুমুখী এইসব নিউজস্ক্রোল সাপের মতো আঁকড়ে ধরতে থাকে তাকে। রিনু এবার জায়গাবদল করে। ‘ফোন ইন’ গানের অনুষ্ঠান করতে করতে ভুলে যেতে চায় এ পৃথিবীর যাবতীয় মৃত্যু ও হত্যার অহঙ্কার। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়তে থাকে, টপকে যেতে থাকে অপরিচয়ের গণ্ডি, বাড়ির মতোই পালটে যায় স্টেজগুলি, রাতগুলি হারিয়ে যায়, ধাবমান গাড়ির জানালার বাইরে পালায় রিনুর লাল নিশানে মোড়া কলকাতা।
এক একদিন হঠাৎ মনে হয় কত কী তো বলার ছিল। সব যে বাকিই থেকে গেল। কত গল্প। কত ছেলেমানুষী। কত অকারণ ভুল বোঝাবুঝি। ভালবাসার টবগুলিতে জল দিতে দিতে একদিন সেই মেয়ের মনে হয় কতজনকে তো এখনও বলা হল না ‘ভালবাসি’। মায়ের কোলে মাথা রাখা হয়নি কতদিন। বাবাইকে পিছন থেকে এসে সে চমকে দেয়নি, তাও তো বহু বহুদিন।
রিনি বিশ্বাস
পড়াশুনো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশুনোর বাইরের পড়া-গান শোনা-ছবি আঁকা-কবিতা-বেড়ানো সঙ্গে নিয়েই পা রাখা পেশার জগতে। বেতার ও টেলিভিশনে কর্মজীবনের সূত্রপাত। ‘খাসখবর’-এ সংবাদপাঠকে ধরলে পেশাগত জীবন এখন সাবলম্বী-অষ্টাদশী। টেলিভিশন-মঞ্চ-টুকটাক লেখালেখি আর একমাত্র সন্তানকে মানুষ করে তোলার চেষ্টাই এখন বেঁচে থাকার রসদ।
আলোচনা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপর ক্লিক করুন।