সাকিন সুতানুটি
লেখক – গগন চক্রবর্তী
প্রচ্ছদ – রনিত মাইতি
অলংকরণ – ডেসমন্ড ডয়েগ
সম্পাদনা – সুমেরু মুখোপাধ্যায়
শিরোনামলিপি- পার্থ দাশগুপ্ত
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা –১২০
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ২৫০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-39-8

অনলাইন কিনতে – বইচই বা থিংকারস লেন
































এই রাজবল্লভপাড়ায় সবারই এরকম শখ আছে। শখ ব্যপারটা কী জানতে চাইলে বাড়িতে বলেছে খুব ভাল্লাগে যেটা করতে, অথচ করলে কোনও পয়সা পাওয়া যায় না, সেটাই শখ। এসব শুনে বুঝেছে এই যে তাঁর রাজবল্লভকে রাজগল্লভ বলতে ভাল্লাগে। এটাও শখ। বুড়ো কর্তা বলেছে রাজা রাজবল্লভ আসলে লোক ভাল ছিল না। সেই যে সিরাজদৌল্লা বাংলার নবাব, তাকে ঠকিয়ে ইংরেজদের সাহায্য করেছিল যে, মীরজাফর, তারই প্রাইভেট সেক্রেটারি ছিল রাজবল্লভ, বাড়ি চুঁচুড়া । এইবার নবাব তো মরে গেছে, মীরজাফর ইংরেজদের থেকে মেলাই জিনিসপত্র না খেতাবও পেয়েছে। রাজবল্লভকে সুতানুটিতে কিছু জায়গা টায়গাও দিয়েছে। কিন্তু যে রোগ হয়েছে তার নাম সন্দেহ বাতিক। খালি খালি সন্দেহ করে, এই বুঝি কেউ মেরে ফেললে। সন্দেহ পড়ে রাজবল্লভের ওপরে। সে যদি ‘মীরজাফরি’ করে, এই ভয়েই ঘুম উড়ে যায়। খুন করতে লোক পাঠায় রাজবল্লভের বাড়ি। সে ততক্ষণে সাঁ! গঙ্গা দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে ফের সো-জা চুঁচুড়া। সে মাঝে মাঝে ভাবে, এখনও যদি থাকত ওই রাস্তাটা! সে একবার যেত। শখের ব্যপারটা তাঁর ষোলো আনা আছে।

উত্তর কলকাতা আসলে একটা জ্যান্ত আর্কাইভ। সদা সজীব। স্মৃতি দৈনন্দিনে ব্যবহৃত। তাই জ্যান্ত। প্রতি মুহূর্তেই। তাই স্মৃতি শেষ হয়েও হচ্ছে কই? বরং বাড়ছে পলে-অনুপলে। কলিকাতা চলিয়া গেছে, উত্তর কলকাতা রহিয়া গিয়াছে। খাঁ খাঁ দুপুর। চিল উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে গায়ে গায়ে লাগা ছাদ আর জড়ামড়ি করা অসংখ্য ধুলোমাখা তারের উপর। ধুলোমাখা আকাশে। এক ছাত থেকে অন্য ছাতে বয়ে যাচ্ছে পড়শির ছাপার শাড়ি। সমস্ত দিন কেউ আসেনি ছাতে, কিন্তু গলির মুখের চায়ের দোকান ভরতি ছিল। বিশাল পাঞ্জাব লরি আর অকুতোভয় ভ্যান রিকশার গায়ে পড়া ভাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে একখানা ফুটপাতে গিয়ে উঠলে দেখা যায় ঝরোখা কাটা বারান্দা। দরজায় মকরমুখ কড়া গাছি। তলায় চাবির ফুটো। দেখে বোঝা যায়, চাবি খুব বেশি পড়ে না কেন যে মন উড়ে যায়, কোথায় যেন, কবেকার সেই পিছন দিকের পাতায়। যেসব গল্পকে আজকাল বলে পিরিয়ড পিস। পাশাপাশি হাঁটতে থাকে তিনশো বছর আগের কলকাতা, গমগমে চিৎপুর, হরেক নকশা, খেউড় আর নেশা হুজ্জুত করা পক্ষীর দল।

গগন চক্রবর্তী

ছবি সৌজন্যে: প্রত্যাশা

গগন চক্রবর্তীর জন্ম ১৯৯০ সালের তেরোই জানুয়ারি, উত্তর কলকাতা তথা বাগবাজারে। এই অঞ্চলেই তার স্কুল কলেজ জীবন মিলিয়ে আঠাশ বছরের আয়ু। উত্তর কলকাতার সামগ্রিক জলবায়ু গঙ্গার মতো অনন্ত স্রোতে বড় করে তুলেছে তাকে। পারিবারিক ঐতিহ্য ও  পারিপার্শ্বিক স্রোতের সঙ্গে সরাসরি সান্নিধ্য তার দেখা শেখার মূল পাঠ। বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ও সামান্য সময়ের জন্য সমাজ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণামূলক শিক্ষা তার এই অনুসন্ধিৎসাকে ইন্ধন জোগায়।

বর্তমানে উড়িষ্যা নিবাসী লেখকের এটি প্রথম বই।