দশকর্ম ভাণ্ডার জীবনের দশটি অভিজ্ঞান। ট্রামের রুলটানা খাতার মধ্যে শৈশবের অক্ষরগুলি শিখেছিল অপভাষা থেকে সামাজিক বৈষম্যের ধারাপাত। ঝাপসা রঙের পলেস্তারার মধ্যে কোনও এক চোরা কুঠুরিতে পড়ে থাকে ফুসমন্তর আর দেদার উত্তর কলকাতা। সে কলকাতা মানে তো আর কলকাতা নয়, সেখানে থাকে ভারি অসম্ভব কুচুটে কিছু কিম্ভূত মানুষ। সব অবিকল ভাবে ধরা আছে —শৈশব ও যৌবনের অমলিন কিছু মুখ ভাঙচানি থেকে নখের আঁচড়। মনে দাগ কেটে যায় এক শিশু শ্রমিকের কথা, যাকে কুসংস্কারের জেরে রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে তার নিজের মা। জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে শখের কাঠের পুতুল আল্লাদির রং চটে যায়, কিন্তু সে ভাঙে না। এই কাহিনিতে এসেছে এক মেয়ে শিশুর চোখে দেখা সত্তর দশকের দিন। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে, প্রায় ছুঁয়ে, দেখে সে; চিনতে শেখে নিষ্ঠুরতাকে। আবছা অনুভব করে দারিদ্র্য, রাজনীতি এবং যুদ্ধের সমস্ত রূঢ়তা। সে মেয়ের জীবন জুড়ে টাঙানো থাকে মৃত্যুর সামিয়ানা, যে মৃত্যুকে নিয়ে উৎসবে মাতে তার আশেপাশের মানুষজন। এরই মধ্যে নিষিদ্ধ পল্লী ও প্রেম সম্পর্কে শৈশবেই একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় তার ম, উপলব্ধিতে। তার দেখা প্রান্তিক নারীরা পরিচয়ের প্রশ্নে থাকে সতত সন্দিহান। অবশ্য উত্তাল যৌবন সে সবের আর রেয়াত কবেই বা করেছে? এই কাহিনি এক টাইম মেশিনে কাটা সুতোয় বানানো বুড়ির চুলের রংধনু। যা শুনিয়ে যায় তার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত আফগানিস্তান সফরের কথা। সার্বিক দংশনে ছত্রাকার বিদেশের ছাত্রজীবনে সে রূপান্তরিত হয় সওদাগর কন্যায়—স্মাগলিং হয়ে ওঠে জীবিকা। জীবন হয় অভিজ্ঞতায়, অ্যাডভেঞ্চারে টইটুম্বুর। নিজের নারীসত্ত্বাকে চিনতে শেখার সমান্তরালে তার জীবনে আসতে থাকে একের পর এক অনুপম সব প্রেম। এসবের টানাপোড়েনে সে হয়তো কখনও কখনও মানুষী থেকে বস্তু হয়ে পড়ে। কখনও বা বস্তু থেকে মানুষ হয় প্রেমের নিরিখে।
যোষিতা
![](http://lyriqalbooks.com/wp-content/uploads/2020/06/Joshita.jpeg)
জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর কলকাতায়। ১৯৮৫ সালে উচ্চশিক্ষার্থে তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে যাত্রা। প্রাক-পেরেস্ত্রৈকা ও তৎপরবর্তীকাল, সব মিলিয়ে দশ বছর কাটিয়েছেন মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তানে। তিনি সামাজিক প্রথাবহির্ভূত জীবনের পাশবইয়ে জমার অঙ্ক ভরে তুলেছেন বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞান। ১৯৯৫ সালের মাঝামাঝি থেকে প্রায় ছ’বছর কলকাতায় থাকাকালীন জীবিকার সন্ধানে একের পর এক কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়।
২০০১ সালে চাকরিসূত্রে সুইটজারল্যান্ড পাড়ি দেন, পরবর্তীতে সেখানেই থিতু, বর্তমানে সেদেশের নাগরিক। তাঁর লেখালেখির শুরু শিক্ষাজীবনে; ১৯৮১-৮২ সালের দিকে। ১৯৮৫ সাল অবধি লিখেছেন অনেকগুলি নাটক, শ্রুতিনাটক। এগুলোর বেশ কিছু বেতারে সম্প্রচারিত, বাকি পাণ্ডুলিপি সবই হারিয়ে গেছে। ২০০৩ সাল থেকে তিনি আবারও লিখতে শুরু করেন তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা ও উত্থান-পতনের শব্দগাথা। প্রথম বই ‘আইটি আইটি পা পা’ প্রকাশ হয় ২০১৭ সালের কলকাতা বইমেলায়। পেয়েছেন প্রথম ‘বইচই আন্তর্জাল সাহিত্য সম্মান’ পুরস্কার।
চাকরিজীবনের পাশাপাশি মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমানাধিকারের জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।
আলোচনা বা সমালোচনাগুলি পড়তে ছবির উপরে ক্লিক করুন।
![](http://lyriqalbooks.com/wp-content/uploads/2020/06/dashokarma-bhandar_25_01_20-scaled.jpg)
![](http://lyriqalbooks.com/wp-content/uploads/2020/06/dashokarma-bhandar_ekdin_30_8_19.jpeg)