এসেছিলে তবু এষণায়
লেখক –লিপিকা দে
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – মল্লিকা দাস সুতার
সম্পাদনা – সামরান হুদা
শিল্পনির্দেশনা – সায়ন্তন মৈত্র
বই নকশা – ময়াঙ্ক রাই
পৃষ্ঠা – ১৯২
ডিমাই সাইজ, হার্ড বাউন্ড, কাপড়ে বাঁধাই
মূল্য – ৩৫০ ভারতীয় টাকা
ISBN – 978-93-87577-16-9

অনলাইন কিনতে –
বইচই বা থিংকারস লেন ডট কম































নব্বইয়ের দশকে পৃথিবীর মানচিত্রটা বদলে গেল আচমকা। দেশে অর্থনীতির মূল কাঠামোটা বদলে গিয়ে পরিবর্তনের ঢেউ লাগল অন্দরমহলেও। পরিবর্তন এল প্রযুক্তির জগতেও। সুদূর চলে এল ঘরের আঙ্গিনায়—ঘরের বাঁধন ভেঙ্গে যেতে থাকল। ধাক্কা লাগল নিশ্চিন্ততার ঘেরাটোপে বন্দী চাকুরে-সংসারী মেয়েটার মনেও। সব উপকরণ হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও চেনা পথের একঘেয়েমিতে ‘ভাল থাকার’ বোধটা আস্তে আস্তে খসে পড়তে থাকল।

অজানার হাতছানিতে সাড়া দিয়ে এক পা সংসারের দাঁড়ে বেঁধে আর এক পা রাখে ইচ্ছেঘোড়ার জিনে। শুরু হয় এক অন্যরকম চারণ। পরিব্রাজকের নির্লিপ্তি নয়—পর্যটকের রোমাঞ্চ নয়—সভা-সমাবেশে নানা দেশের মানুষের সঙ্গে কাজের ফাঁকফোকরে-পথেঘাটে বাসে প্লেনে কথোপকথনে পরিচয় হয় এক অন্য পৃথিবীর সঙ্গে। পাঠ্য বইয়ের মৃত শব্দেরা নয়, এক একটা দুপুরে জীয়নকাঠির ছোঁয়ায় জেগে ওঠে খবরের কাগজে পড়া ইতিহাসের টুকরোগুলো। বার্লিনের দেওয়াল ধসে পড়ার রাত অথবা তাহ্রির স্কোয়ারের এগারো দিন ব্যাপী ছাত্র বিপ্লব। বিজ্ঞানী মন অবচেতনে খুঁজে চলে সেই সব ঘটনাবলির সঙ্গে আজকের মানুষজনের ভাল থাকা না থাকার কার্য-কারণ সম্পর্ক। 
এভাবে বাতাসে ভেসে এসেছিল ক্ষোভের গন্ধ। যেমন তুরস্কে ছিল ঝড়ের পূর্বাভাস। ধর্মের নামে অথবা স্বাধীনতার খোঁজে শতধা হয়ে যাওয়া দেশগুলির বাসিন্দাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে টের পাওয়া যায় যে সাধারণ মানুষের কাছে গণতন্ত্রই বা কি আর ধনতন্ত্রই বা কি! দিন আনা দিন খাওয়া জীবনে ভাল থাকার মাত্রা নির্ধারণ করে এক বোতল বিয়ারের দাম।

এই বই এক নারীর নিজস্ব প্রিজমে দেখা দুনিয়া যাতে নানা কোণ থেকে এসে পড়া আলোর বিচ্ছুরণে মানুষ, প্রকৃতি আর সময় মিলেমিশে আঁকে এক অনন্ত বাঙময় চালচিত্র।

লিপিকা দে

ষাটের দশকে জন্ম।মেয়েবেলা কেটেছে ইস্পাতনগরী দুর্গাপুরে। স্বপ্নবোনা থাকত ছিমছাম শহরটার লাল-হলুদ বাংলো সংলগ্ন সাজানো বাগানে, ষ্টিল মেল্টিং শপের চিমনি নির্গত ধাতব রঙিন ধোঁয়ায়, গুলমোহর ছাওয়া সর্পিল রাস্তায়, কারখানার স্কুলে পড়তে যাওয়া নীল-সাদা ইউনফর্ম পরা ছেলে-মেয়েদের চোখের পাতায়। আর সবার মতোই তাই স্কুল পেরিয়েই এল বৃহত্তরর সন্ধানে শহর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ার পালা। আই আই টি খড়গপুরে অঙ্ক নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়তে ঢুকে—সেখানেই থেকে যাওয়া আরও বেশ কিছু বছর—একেবারে কম্পিউটার সায়েন্সে এম টেক ও ডক্টরেট করে সেখান থেকে বেরোনো। মধ্যবর্ত্তী সময়টাতে শিক্ষাগত সার্টিফিকেটের চেয়ে বেশি জমল নাটকের শংসাপত্র।    

তার পর ঘর বাঁধা আরেক আই আই টি দিল্লীতে। টেবিলের ওপারে—শিক্ষিকা।

দক্ষ জাগলারদের মতো ব্যালেন্স করতে করতে জীবন যাপন—ছাত্র-ছাত্রী, গবেষণা, সন্তান-সংসার, নাটক-লিটল ম্যাগাজিন—যেমন যেমন হওয়ার কথা। এতদিন প্রয়োজন হয়নি বলে আপোশ করতে শেখা হয়নি।তাই বহু হৃদয়ে বহু বিস্ময় জমা করে একদিন আই আই টি র চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস। আই টি ফার্মে গবেষণা হয়? কৌতূহল ও কৌতুক মিশ্রিত এই প্রশ্নটার একমাত্র উত্তর—আন্তর্জাতিক গবেষণার চালচিত্রে নিজের ও সংস্থার নাম প্রতিষ্ঠা  করা। গবেষণার ফসলের ব্যবসায়িক মূল্য প্রাপ্তিতে সংস্থার তরফ থেকে জুটেছে দু একটা পুরষ্কারও। দৈনিক কাজের ফাঁকেই আছে আরও একটা ভালবাসার কাজ—কলেজ ক্যাম্পাসওবিভিন্ন কম্পিউটার সোসাইটির মীটিঙগুলিতে পরবর্ত্তী প্রজন্মের নারীদের প্রোৎসাহিত করে বলতে শেখানো—তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই।  

ফোটো- শান্তনু চৌধুরী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *