কখনও কখনও কারও কারও সঙ্গে এমন হয়। সামান্য মানুষকেও জীবন বেছে নেয় কিছু অসামান্য অভিজ্ঞতার জন্য। চলার পথে পালটে পালটে যাওয়া দৃশ্যপট, যেন ম্যাজিক। পথে দেখা হওয়া মানুষগুলোই স্বপ্ন দেখতে আর স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণাগুলোকে সইতে শেখায়। দেশভাগের অনেক অনেক পরে জন্মেও কারও থাকে এক নিজস্ব দেশ, গ্রাম, মনের আলিসের ব্যক্তিগত ওয়ান্ডারল্যান্ড, নিজস্ব লবটুলিয়া। শঙ্খ কেমন করে লিখে ফেললেন এই প্রজন্মের বাতিল কিছু দীর্ঘশ্বাস! একরত্তি মফঃস্বল শহরের শৈশব, ভুল করে পড়ে ফেলা ইঞ্জিনিয়ারিং, জীবিকার প্রয়োজনে চষে ফেলা বনবাদাড়, পদে পদে ঠোক্কর আর উঠে দাঁড়ানো মানেই চাকরি-বদল, সাত ঘাট ঘুরে ঘুরে অয়নপথে পরিক্রমা।
শিল্পী তার বেদনার আত্মঘাতী রঙে যখন এঁকে ফেলেন হারানো দেশের রোমন্থনের সিন্দুক তখন সে মণিকোঠা খুললেই চিৎকৃত হয় এক স্বকীয় প্রতিবাদ। একদিকে শিল্পী মৃন্ময় দেববর্মা উড়াল দিলেন সুবচনীর খোঁড়া হাঁসের পিঠে চেপে, তরঙ্গমালায় ঘুঙুরের শব্দ, গন্তব্য হৃদয়প্রদেশ। এ যে সাত ঘাটের রঙিলা জল, এক বিহ্বল পাঠ, যা মানুষ বারে বারে পড়ে চলে সারা জীবন।
শঙ্খ কর ভৌমিক
তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার বিশ্বরেকর্ডের দাবিদার। ল্যামি, লামা, খুড়ো, তারাপদ, অপু এবং আরও বহু বিচিত্র ডাকনামে পরিচিত। জন্ম ও বড় হওয়া ত্রিপুরার আগরতলায়, নবজন্ম শিবপুর বি ই কলেজে। গত কুড়ি বছরে ইঞ্জিনিয়ার, ফিরিওয়ালা, অধ্যাপক, শখের গোয়েন্দা, খুচরো ব্যবসা ইত্যাদি গোটা আটেক বিভিন্ন পেশায় ভাগ্যপরীক্ষা করে আপাতত সফটওয়্যার কোম্পানিতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট দেখাশোনা করেন বলে জানেন তার স্ত্রী। এটা আদতে চোদ্দো নম্বর চাকরি। নেশা মানুষ জমানো। ঝুড়ি ঝুড়ি বন্ধুবান্ধবের মধ্যে অধ্যাপক, পুলিশ কমিশনার থেকে শুরু করে কাঠবেকার হাফ-ফুল-সিকি সব পাগলই আছেন। একটু আধটু লিখে থাকেন। ছবিটবিও এঁকে থাকেন সামনে সুন্দরী দেখলে। ঘটনা হল এক আধটা লেখা বড় কাগজেও বেরিয়ে গেছে আর তাই বন্ধুদের দাবীতে এই বই। তার লেখা পড়লে অন্যকিছু মনে হলেও তিনি খেতে ভালবাসেন – চা এবং যাবতীয় তামাকজাত দ্রব্য। ভয় পান – গোমড়ামুখোদের। যে কোন ছিঁচকাদুনে বাচ্চাকে গ্যারান্টিসহকারে হাসিয়ে থাকেন। এ হেন গম্ভীর মানুষটির প্রথম বই, সাত ঘাটের জল।