তীব্র সে গরল।
শরীরে এসে পড়লে চামড়া, মাংস ফেটে গলে যায়। টয়লেট ক্লিনার হিসেবে ব্যবহৃত হত একদা। চামড়া ট্যানিং এর কাজে, সোনার গয়না বানানোর কাজে এখনও ব্যবহৃত হয় সেই অ্যাসিড। এ ছাড়া আরও একটি বিষয়ে এখন এর বহুল ব্যবহার। আক্রমণ। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ। পারিবারিক ঝামেলা। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রেমপ্রস্তাবে ‘না’ বলার জন্য।
একটি ‘না’। সঙ্গে সঙ্গেই মগ বা বালবে ভরে আনা খানিক তরল আগুন, বা তার চেয়েও তীব্র তরলটা ‘না’ বলা মেয়েটির মুখে ছুঁড়ে দেবে প্রহর্তা। মেয়েটি উন্মত্তের মতো ভয়ানক আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়বে। অজ্ঞান হয়ে যাবে মর্মন্তুদ যন্ত্রণায়। হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পরেও আবার অজ্ঞান হতেই থাকবে। সব গলে গেছে যে! চোখ গলে বেরিয়ে এসছে তরল হয়ে। কান নেই। নাক অর্ধেক নেই। মুখের একপাশ ফেটে লাল মাংস বেরিয়ে এসছে। প্রস্যন্দিত যৌবন। ‘না’ বলছ! একটা মেয়ে হয়ে! একজন পুরুষকে! তাও ভালবাসার প্রস্তাবে! ধন্য হয়ে, কৃতজ্ঞ হয়ে সারা জীবন থেকে যাওয়ার কথা করজোড়ে! না পারলে অ্যাসিডে গলে পচে জীবন্মৃত হয়ে থেকে যাও বাকি জীবনটা। তোমার জীবন জীবিকা মনের জোর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাক তোমার পরিবার। মেয়েটির রূপ গলে পচে যাক্। জীবন্মৃত হয়ে যন্ত্রণায় পড়ে থাকুক।
অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়েই এই বই অবহু (এখনও) অপরাজিতা। রয়েছে অ্যাসিড আক্রান্তদের অবর্ণনীয় মর্মন্তুদ বিকরাল অভিজ্ঞতা। নিজেদের ভাষায়। অন্যদের কথাতেও। তবে শুধু অন্ধকার নয়। শেষ পর্যন্ত আঁকা হয়েছে আলোর কথা। অপরাজিতা মনীষা, পারমিতা, সুনীতা নিজেরাই লিখেছেন নিজেদের যাত্রাপথের কথা। উত্তরণের প্রয়াসের কথা। সমবেত কণ্ঠে প্রথমবার ধ্বনিত হল অ্যাসিড আক্রান্তাদের কথা বাংলা প্রকাশনার চৌকাঠে। তমসাকে হারিয়ে জ্যোতির পথে এগোনোর মর্মগাথাই ‘অবহু অপরাজিতা’।
রোহিণী ধর্মপাল
বেদ-বিশেষজ্ঞ সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপিকা গৌরী ধর্মপালের কন্যা। নিজেও রামকৃষ্ণ সারদা মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনে শিক্ষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপিকা। ভারতীয় সংস্কৃতি মহাকাব্য ও পুরাণ নিয়ে আগ্রহী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিভাগ থেকে গবেষণা করেছেন প্রাচীন ভারতীয় অপরাধ ও তার সংশোধনী প্রক্রিয়া এবং বর্তমান প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রতিতুলনা। গবেষণাটি ‘অপরাধ ও অপরাধীর পুরোনতুন কাহিনী’ নামে পুস্তকাকারে প্রকাশিত। তাঁর সম্পাদনায় বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লালমাটি প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত গৌরী ধর্মপাল রচনাবলী, প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড। বইচই পাবলিকেশন থেকে প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন লেখকের লেখায় বৌদ্ধ যুগের আট মহীয়সী রমণীর কথা ‘মণিমঞ্জুষা’ । বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মূলত ভারতীয় সংস্কৃতি ও সমাজ নিয়ে লেখেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘একলক্ষ্য’ বলে কিশোর উপযোগী গ্রন্থ ও লালমাটি প্রকাশনা থেকে ‘মহাকাব্যে নারী পুরুষের মিলন কাহিনী’ বলে একটি সাহসী রম্য গ্রন্থ।
নানা ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সুন্দরবনের সার্বিক উন্নতির জন্য পাথরপ্রতিমা রানার্স বলে একটি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন। অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট, সঙ্গে প্রচেষ্টা সেই সব মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করে তোলার।